নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে নিজেকে পরিস্কার থাকতে হবে আশপাশ পরিস্কার রাখতে হবে । স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে । তারজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। নাগরিকদের সচেতনতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আমরা এই ক্যাম্পেইন করছি। আমরা আশা করব মানুষ যেন নিজেরাই এই স্বপ্রণোদিত হয়ে ’বিচ ক্লিনিং’ মতো এই ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কথাগুলো বলছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ব্র্যাক-এর উদ্যোগে বিশ্ব পরিচ্ছন্নতা দিবসে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জরুরি সহায়তা প্রকল্পের-প্রকল্প পরিচালক গোলাম মুকতাদির।
তিন শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ব্যতিক্রমী ‘বিচ ক্লিনআপ ক্যাম্পেইন’ অনুষ্ঠিত হয়।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে প্লাস্টিক বর্জ্যমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব করতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই সমুদ্র সৈকতে ব্যতিক্রমী ‘বিচ ক্লিনআপ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের মাঝে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। ২০শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব পরিচ্ছন্নতা দিবস উপলক্ষে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ব্র্যাক-এর যৌথ আয়োজনে এই ‘বিচ ক্লিনআপ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হয়। বিকাল ৩টা থেকে এই ক্যাম্পেইন শুরু হয়, শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৫টায় ।
জাতিসংঘ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ব্র্যাকসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা এই ক্যাম্পেইনে অংশ নেন। স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী, উন্নয়ন কর্মী ও পর্যটকসহ এতে তিন শতাধিক মানুষ স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। তারা গ্লাভস ও বর্জ্যব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্লাস্টিক বর্জ্য ও আবর্জনা পরিষ্কার করেন।
ক্যাম্পইনের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে ছিল সৈকত পরিষ্কার করা, সচেতনতামূলক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনটি স্থানীয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এবং সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া ফেলে।
অতিথি ছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জরুরি সহায়তা প্রকল্পের-প্রকল্প পরিচালক গোলাম মুকতাদির, কক্সবাজারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মনজুর, ইউএনডিপির কক্সবাজার সাব অফিসের টেকসই পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রজেক্ট ডেভলপমেন্ট স্পেশালিস্ট দিপক কে. সি, ইউনিসেফ-এর ওয়াশ অফিসার সাজেদা বেগম, ইউএনএইচসিআর-এর ওয়াশ অ্যাসোসিয়েট আব্দুল মাজেদ, ব্র্যাকের মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (এইসসিএমপি)-এর উপদেষ্টা সুব্রত কুমার চক্রবর্তী, সংস্থাটির কর্মসূচি প্রধান আব্দুল্লাহ আল রায়হান, সংস্থাটির একই কর্মসূচির আওতাধীন ওয়াশ ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস (ডিজএস্টার রিস্ক রিডাকশান- ডিআরআর) সেক্টরের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর তনয় দেওয়ান, একই কর্মসূচির স্ট্রাটেজিক, সাপোর্ট অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন এর লিড জাকির হোসেন অন্যান্য কর্মকর্তা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জরুরি সহায়তা প্রকল্পের-প্রকল্প পরিচালক গোলাম মুকতাদির বলেন, অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, “এই উদ্যোগ কেবল সৈকত পরিষ্কার করার জন্য নয়, বরং পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা এই কাজে তরুণদের আরও বেশিমাত্রায় সম্পৃক্ত করতে চাই। কারণ তরুণরাই পারে টেকসই পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে। কক্সবাজার সৈকতে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটক ঘুরতে আসেন। শহরটিতে পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের মাঝে পানির বোতলসহ অন্যান্য কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যও ব্যাপক হারে বাড়ছে। ব্র্যাক পরিচালিত ২০২৪ সালের মার্চ মাসের এক গবেষণায় দেখা যায়, কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩৪ টন প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হয়, যার মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (ঝটচং), মোড়কজাত প্লাস্টিক, পলিপ্রোপাইলিন (চচ) এবং লো-ডেনসিটি পলিথিন (খউচঊ) সবচেয়ে বড় অংশ দখল করে।
এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যাপী সমুদ্রভিত্তিক বর্জ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশ প্লাস্টিক, যা শত বছরেও নষ্ট হয় না। এই দূষণের কারণে সামুদ্রিক কচ্ছপ, ডলফিন, মাছ ও সামুদ্রিক পাখি সরাসরি হুমকির মুখে পড়ছে।
এফপি/আরআই