কক্সবাজার ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি মিয়ানমার সিমান্তবর্তী হওয়ার কারণে মাদককারবারিদের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া খাদ্যসামগ্রীর বিপরীতে মিয়ানমার থেকে দেশে আসছে ইয়াবা, আইসসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি, চাকডালা, ঘুমধুম ও কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উখিয়া হয়ে প্রতিনিয়ত আসছে মাদক। আর এসব কাজে রামু, নাইক্ষ্যংছড়ি, ও কক্সবাজারের বেশ কিছু চোরাকারবারি কাজ করছে অন্তরালে।
একটি অনুসন্ধান বলছে কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া এলাকার বেশ কয়েকজনের সিন্ডিকেট রয়েছে যারা মিয়ানমার থেকে গরু, মাদক আনে এবং দেশ থেকে খাদ্যসামগ্রী যাচ্ছে।
এদিকে মায়ানমার হতে পণ্যের বিনিময়ে মাদক পাচারকালে বিপুল পরিমাণ খাদ্য সামগ্রীসহ ১০ জন পাচারকারীকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, একটি অসাধু চক্র বাংলাদেশি পণ্যের বিনিময়ে ইয়াবা-মদ সহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে পাচার করবে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় কোস্ট গার্ড জাহাজ কামরুজ্জামান কর্তৃক সেন্টমার্টিন ছেড়াদ্বীপ সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালীন উক্ত এলাকায় সন্দেহজনক একটি ফিশিং বোটে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মায়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্যে বহনকৃত প্রায় ৩৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ হাজার কেজি ডাল, ১ লক্ষ ৫০ হাজার পিস মশার কয়েল, দুই হাজার পাচঁ শত কেজি রসুন, ১ হাজার কেজি টেস্টিং সল্ট, ১০ হাজার পিস রয়েল টাইগার এনার্জি ড্রিঙ্কস, আড়াই হাজার কেজি পেঁয়াজসহ ১০ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়।
জব্দকৃত মালামাল, পাচারকাজে ব্যবহৃত বোট ও আটককৃত পাচারকারীদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চোরাচালান রোধকল্পে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।
এদিকে গত ৩০ আগস্ট (শনিবার) বাংলাদেশ থেকে চোরাইপথে মিয়ানমারে যাচ্ছে ভোজ্যতেল, ডাল, আদা, আলু, কাপড়, সিমেন্ট ও খাদ্যসহ নিত্যপণ্য। বিনিময়ে দেশে আসছে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক। এমন তথ্য দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টায় কোস্ট গার্ড আউটপোস্ট পতেঙ্গা এবং পুলিশের সমন্বয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানাধীন কয়লা ডিপো পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন কর্ণফুলী চ্যানেলে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে একটি সন্দেহজনক কার্গো বোটে আটকের পর তল্লাশি করা হয়। কার্গো বোটে অবৈধভাবে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্যে বহন করা প্রায় ৫১ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৬২০ বস্তা ডাল, ১০ বস্তা আদা, ৪৮০টি লুঙ্গি, ৪ শত শাড়ি উদ্ধার করা হয়। এ সময় পাচারকাজে ব্যবহৃত কার্গো বোটসহ ৭ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়।
এর আগেও গত ১৮ আগস্ট মিয়ানমারে মাদকের বিনিময়ে পাচারের সময় ৫০০ বস্তা আলু এবং একটি ফিশিং বোটসহ ১১ জন পাচারকারীকে আটক করে কোস্ট গার্ড। কুতুবদিয়া থানাধীন আলী আকবর ডেইল সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করা হয়।
কোস্ট গার্ড জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, একটি অসাধু চক্র বাংলাদেশি পণ্যের বিনিময়ে ইয়াবা-মদ’সহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পাচার করবে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে কুতুবদিয়া থানাধীন আলী আকবর ডেইল সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান অবৈধভাবে শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারে পাচারকালে একটি বোট তল্লাশি করে প্রায় ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫০০ বস্তা আলু এবং পাচারকাজে ব্যবহৃত ফিশিং বোটটিসহ ১১ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়।
অন্যদিকে টেকনাফে মাছ ধরার ট্রলারের আদলে ইয়াবার চালান পাচারকালে ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারিকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।
তবে পাচারকারী ট্রলারটির মালিক কক্সবাজারের মহেশখালীর ছোট কুলালপাড়া বাসিন্দা নুর মোহাম্মদের ছেলে রশিদ উল্লাহ।
তিনি বতর্মানে টেকনাফ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কলেজপাড়ায় বসবাস করছেন। আটক দু’জন হলেন- টেকনাফ উপজেলার জাদিমুরা ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের এ-ব্লকের মৃত কবির আহমদের ছেলে মো. আনাছ (৪০) এবং টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা মৃত সৈয়দ আমিনের ছেলে মো. সাদেক (১৯)।
টেকনাফের উখিয়া ৬৪ ও টেকনাফ ২ বিজিবি যৌথ অভিযান চালিয়ে মাছ ধরার ট্রলার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এ সময় ২ জেলেকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া টেকনাফে নাফ নদীর ফিশারি ঘাটে বিজিবি পৃথক অভিযান চালিয়ে তিন লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এসময় দুই ইয়াবা কারবারিকে আটক করেছে বিজিবি।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ও ভোরে টেকনাফের ফিশারি ঘাট ও নাফ নদীর জালিয়ার দ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা উদ্ধার ও আটক করা হয়। এমন প্রতিনিয়ত মাদক ধরা পড়ছে আবার কিছু মাদক চোখ ফাকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌছে যাচ্ছে।
এফপি/রাজ