কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের জীবনরক্ষাকারী সি-সেফ লাইফগার্ড সেবা যে কোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অর্থের জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের পর আর কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে গোসল করতে নেমে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়বে।
২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন (RNLI)–এর সহায়তায় বাংলাদেশে CIPRB (Centre for Injury Prevention and Research, Bangladesh) এই সেবাটি চালু করে। শুরু থেকেই সাগরে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধার, মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালিয়ে আসছে সি-সেফ।
প্রতিষ্ঠানটির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, গত বছরের ডিসেম্বরেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় দাতা সংস্থা প্রথমে ছয় মাস এবং পরে তিন মাস প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায়। কিন্তু সেপ্টেম্বরের পর আর কোনো অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সেবা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০৭ জন পর্যটককে জীবিত উদ্ধার করেছে লাইফগার্ডরা। একই সময়ে স্রোতে ভেসে গিয়ে মারা যাওয়া অন্তত ৬৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে ২৭ জন লাইফগার্ডসহ মোট ৩৫ জন কর্মী এই সেবার সঙ্গে যুক্ত। মাসে গড়ে ১৪–১৫ লাখ টাকা খরচ হয় পুরো কার্যক্রম চালাতে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, “হোটেল ব্যবস্থাপনার নীতিমালায় লাইফগার্ড নিয়োগের বিষয়টি রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সৈকত এলাকার হোটেলগুলোকে অর্থায়ন করে সেবাটি চালু রাখতে হবে। বড় হোটেলগুলো তিনজন এবং ছোট হোটেলগুলো একজন লাইফগার্ডের বেতন বহন করবে।”
তবে কক্সবাজার হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানিয়েছেন, এত বড় অঙ্কের অর্থ জোগান দেওয়া হোটেলমালিকদের পক্ষে কঠিন। কেউ যদি উদ্যোগ নেনও, তা বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে। ফলে অক্টোবর থেকে লাইফগার্ড সেবা চালু রাখা সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে চাকরি হারানোর শঙ্কায় উদ্বিগ্ন কর্মীরা। লাইফগার্ড মো. ওসমান ও জয়নাল আবেদীন বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জীবন বাঁচিয়েছি। এখন আমাদের জীবনই অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।”
প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ থেকে এক কোটি পর্যটক কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণে আসেন। মাত্র পাঁচ কিলোমিটারে এই সেবা থাকলেও বাকি ১১৫ কিলোমিটার সৈকত এখনো অরক্ষিত। সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে পর্যটন খাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এফপি/রাজ