বাইশারী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরাজীর্ণ ভবনে প্রায় ১৪ হাজারের অধিক সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে আসছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। ডুকতেই দেখা যাবে কোন ধরনের সাইনবোর্ড় নেই । জানালা ভাঙ্গা বেশ কয়েকটি, টয়লেটের খারাপ অবস্থা ,ডাক্তার বসার তেমন স্বাস্থ্যসম্মত জায়গা নেই। স্যাতস্যাতে পরিবেশে সেবা দিয়ে আসছে যারা কর্মরত রয়েছে।
১৪ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা এই হাসপাতালটি চলছে কোন রকম ভাবে। কাঠামো অনুযায়ী থাকার কথা ১ জন মেডিকেল অফিসার,১জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন মিডওয়াই ফারিনার্স, ১ জন অফিস সহায়ক, বাস্তবে উপস্থিত ছিলেন কেবল একজন অফিস সহায়ক মো. হাবিব।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপস্থিত ছিলেন কেবল একজন অফিস সহায়ক মো. হাবিব। অন্যদিকে, স্থানীয় উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আরিফা কোনো বেতন-ভাতা ছাড়াই প্রতিদিন ২শত থেকে ৩শতজন রোগীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি ঔষধ পরিবহনের খরচ পর্যন্ত তিনি নিজে বহন করেন বলে জানান। এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাসে সর্বোচ্চ ১০ দিন ঔষধ পাওয়া গেলে ও বাকি ২০ দিন থাকে সম্পূর্ণ ঔষধ শূন্য। এমনকি জ্বর, সর্দি-কাশি কিংবা ব্যথার মতো সাধারণ রোগের প্রয়োজনীয় ঔষধও মেলেনা বলে অভিযোগ করেছেন রোগীরা।
মো. শাহজাহান, একজন রোগী, জ্বর ও মাথাব্যথার চিকিৎসা নিতে এসে হতাশ হয়ে বলেন “ঔষধ নাই, শুধু প্রেসক্রিপশন লিখে দেন, কিন্তু কিনতে হয় বাইরের ফার্মেসি থেকে।”
ছমুদা খাতুন, বাত ব্যথায় ভোগা রোগী, ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন “প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোন ঔষধ এখানে পাওয়া যায় না। গরিব মানুষ হইয়া বাইরের দোকান থেকে সব কিনতে পারিনা।”
রফিকা বেগম দুর্বলতা নিয়ে আসা রোগী জানান,“ডাক্তারের দেখা পাই, কিন্তু প্রেসক্রিপশনে যে ঔষধ লেখা হয়, হসপিটালে নাই। তাই চিকিৎসা অর্ধেকেই থেকে যায়।”
এই হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন রোগিরা কোনরকম, স্বাস্থ্য সেবা নিলেও মেডিসিন সুবিধা তেমন পাননা বলে জানা গেছে। বেশিভাগ ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হয় বলে জানান আগত রোগিরা।
উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আরিফা এ প্রতিবেদককে বলেন “আমি কোনো বেতন-ভাতা পাইনা। তারপরও মানবিক কারণে প্রতিদিন রোগীদের সেবা দিচ্ছি। সরকারি ঔষধ গুলো পরিবহনের খরচও আমাকে বহন করতে হয়। অথচ মাসে ১০ দিন ঔষধ পাওয়া যায়, ২০ দিন থাকেনা। এতে রোগীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
এ বিষয়ে বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এই পরিস্থিতিতে বাইশারীর হাজারো মানুষ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত হাসপাতালের সংস্কার, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ ও ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আবুল মঞ্জুর বলেন,আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই বর্তমানে জনবল সংকট রয়েছে। তবে শিগগিরই এ সংকট কেটে যাবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হলে বাইশারী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিষয়টিও দেখা হবে। আগামী তিন-চার মাসের মধ্যেই সেখানে চিকিৎসক যোগ দেবেন। তখন আর কোনো সমস্যা থাকবেনা। এছাড়া প্রয়োজনীয় ঔষধও আগামীকাল (রবিবার) পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
এফপি/অআ