কক্সবাজারের চকরিয়া-লামা সড়ক দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ফাঁসিয়াখালী রিংভং ফরেস্ট বিট থেকে কুমারী ব্রিজ পর্যন্ত অঞ্চলটি ভ্রমণকারীদের জন্য আতঙ্কের নাম। অন্ধকার নামলেই কিংবা নির্জন সময়ে যাত্রীবাহী গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুটে নেয় ডাকাতরা।
গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতেও একই এলাকায় যাত্রীবাহী একটি পিকআপভ্যান থামিয়ে যাত্রীদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার পরপরই পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) ও ১ অক্টোবর (বুধবার) ২দিনব্যাপী ফাঁসিয়াখালীর গহীন জঙ্গল থেকে সন্দেহভাজনসহ ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ারের নেতৃত্বে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরকানুল ইসলামের সঙ্গীয় ফোর্স এ অভিযান চালায়। দীর্ঘ অভিযানের পর গহীন জঙ্গলের একটি গোপন আস্তানা থেকে ডাকাতদের আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র, কিরিচ, রশি, মুখোশসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের উচিতারবিল মুসলিমনগর গ্রামের আবদুল মজিদের পুত্র আবুল কালাম (২৪), নজরুল ইসলামের পুত্র মোবারক আলী (২৫), ফতিয়াঘোনা এলাকার শফর মুল্লুকের পুত্র ফারুক (২৭), একই এলাকার ফয়েজ আহমদের পুত্র জিসান (২৩) ও বার্মাইয়া জসিম (২৫)।
ওসি তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, “চকরিয়া-লামা সড়কটি পাহাড়ি ও বনাঞ্চল ঘেঁষা হওয়ায় ডাকাতরা প্রায়ই সুযোগ নেয়। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। গত রবিবার রাতে ডাকাতির ঘটনার পর পুলিশ ওই ডাকাতচক্রকে ধরতে অভিযানে নামে। গ্রেফতার হওয়া ৫ ডাকাতের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নামও পাওয়া যেতে পারে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা প্রক্রিয়াধীন।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সড়কে ডাকাতির ঘটনা নতুন নয়। গত কয়েক মাসে অন্তত কয়েক দফায় ডাকাতির ঘটনায় যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেওয়া হয়েছে। অনেক সময় যারা বাঁধা দেয়, তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করা হয়েছে।
লামা থেকে নিয়মিত চকরিয়ায় আসা ব্যবসায়ী নুরুল আবসার বলেন, “ডাকাত আতঙ্কের কারণে সন্ধ্যার পর কেউ একা এই সড়কে যাতায়াত করতে চায় না। আমাদের গাড়ি থামিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে ৮/১০ জন ডাকাত ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশের অভিযান আমাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে, তবে পুরো চক্র ধরা না পড়া পর্যন্ত ভয় কাটবে না।”
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডাকাতরা সাধারণত ১০-১৫ জনের দল নিয়ে পাহাড়ি জঙ্গলে অবস্থান নেয়। তারা সড়কের দু’পাশ থেকে একযোগে বের হয়ে গাড়ি থামায়। যাত্রীদের আতঙ্কিত করতে প্রথমেই অস্ত্রের মুখে হুমকি দেয়। এরপর সবাইকে নামিয়ে পকেট তল্লাশি চালিয়ে নগদ টাকা, মোবাইল, গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা বলেন, অনেক সময় গাড়ির ড্রাইভারদেরও মারধর করা হয়, বিশেষ করে যদি তারা গাড়ি না থামানোর চেষ্টা করে।
ফাঁসিয়াখালী ও কুমারী ব্রিজ সংলগ্ন বনাঞ্চল এতটাই ঘন ও দুর্গম যে ডাকাতরা ঘটনার পরপরই সহজে পালিয়ে যেতে পারে। পুলিশের নিয়মিত টহল থাকলেও ডাকাতরা চক্রাকারে অবস্থান পরিবর্তন করে। ফলে পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হয় না।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, নিয়মিত টহল এবং গোপন সোর্স কাজে লাগিয়ে পুরো চক্রকে ধরার চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার হওয়া ৫ ডাকাতের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নামও পাওয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে স্থানীয়রা বলছেন, এই সড়কটি কক্সবাজার-বান্দরবানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুধু পুলিশ নয়, বনবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
উল্লেখ্য, চকরিয়া-লামা সড়কে ডাকাতি বহুদিনের সমস্যা। পুলিশের সাম্প্রতিক অভিযানে ৫ ডাকাত গ্রেফতার হলেও পুরো চক্র এখনও সক্রিয়। তাই যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। সড়কটিকে নিরাপদ করতে নিয়মিত অভিযান চালানোর পাশাপাশি প্রযুক্তি-নির্ভর নজরদারি ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনমহল।
এফপি/এমআই