আফগানিস্তানে টানা দুই দিন ইন্টারনেট ও টেলিকম পরিষেবা বন্ধ থাকার পর বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেল থেকে ধাপে ধাপে সংযোগ ফিরতে শুরু করেছে। নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, দীর্ঘ অচলাবস্থার পর আংশিকভাবে ইন্টারনেট স্বাভাবিক হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, কাবুলসহ বিভিন্ন প্রদেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ওয়াই-ফাই পরিষেবা ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি’র সাংবাদিকরাও বিভিন্ন অঞ্চলে যোগাযোগ ফেরার খবর নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে হঠাৎ করে আফগানিস্তানজুড়ে ইন্টারনেট ও টেলিকম সেবা বন্ধ হয়ে যায়। তালেবান সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিবিসি আফগানকে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই সংযোগ পুনরায় চালু করা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার এখনো কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।
এর আগে উত্তরাঞ্চলীয় বালখ প্রদেশের এক মুখপাত্র দাবি করেছিলেন, “পাপ প্রতিরোধের জন্য” ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে কিছু সময়ের জন্য তালেবানের তরফ থেকে “অপটিক ফাইবার লাইনে ত্রুটি” থাকার কথাও বলা হয়েছিল, যদিও পরে সেই দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
৪৮ ঘণ্টার এই ‘ডিজিটাল অন্ধকারে’ দেশজুড়ে ব্যবসা, ব্যাংকিং, ফ্লাইট ও জরুরি পরিষেবা কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাজধানী কাবুলের রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল, শপিং সেন্টার ও মানি এক্সচেঞ্জ বন্ধ ছিল, আন্তর্জাতিক লেনদেনও থেমে যায়। অনেক ভ্রমণকারী ফ্লাইট বাতিলের কারণে আটকে পড়েন।
জাতিসংঘের আফগানিস্তান মিশন (UNAMA) সতর্ক করে বলেছিল, দেশব্যাপী ইন্টারনেট ও টেলিকম বন্ধ থাকায় আফগানিস্তান প্রায় সম্পূর্ণভাবে বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মানবিক সংকট আরও গভীর হতে পারে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এই পদক্ষেপকে “অপ্রয়োজনীয় ও মানবাধিকারের জন্য ক্ষতিকর” বলে নিন্দা জানিয়েছে।
সংযোগ ফিরতেই কাবুলের রাস্তায় শত শত মানুষ আনন্দ প্রকাশ করেছেন। একজন দোকানদার বলেন, “এ যেন মৃত্যুর মতো নিস্তব্ধতা ছিল। ব্যবসা নেই, ভবিষ্যতের কোনো আশা নেই। আজ মনে হচ্ছে অন্তত আবার শ্বাস নিতে পারছি।”
এক ডেলিভারি কর্মী সোহরাব আহমাদি জানান, পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পেরে তিনি স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। বিদেশে থাকা তরুণী মাহ, যিনি যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করছেন, বলেন, দীর্ঘ সময় পর পরিবারের কণ্ঠ শুনে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
যদিও আংশিকভাবে সংযোগ ফিরেছে, তবে সব প্রদেশে সমানভাবে নেটওয়ার্ক সচল হয়নি। অনেক স্থানে এখনও সিগন্যাল দুর্বল। সাধারণ মানুষ আশঙ্কা করছে, ভবিষ্যতে আবারও যে কোনো সময় একই ধরনের ‘ডিজিটাল অবরোধ’ নেমে আসতে পারে।
এফপি/রাজ