রংপুর নগরীর অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিশু নিকেতন স্কুলে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করেছে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। জানতে পেরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রমিজ আলমের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে সরে আসে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীরা জানান ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সব দাবি আদায় না হলে প্রতিষ্ঠানে শাটডাউন পালন করা হবে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম চলছে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অবহেলা, অনৈতিক লেনদেন, অতিরিক্ত ফি আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে তারা বলেন, এসব বিষয়ে বারবার জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা ন্যায্য শিক্ষা ও স্বচ্ছ পরিচালনা চাই।
এ সময় তারা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ২১ দফা দাবি আদায়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিপত্র পেশ করা হয়। প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আবু বক্কর সিদ্দিক শিক্ষার্থীদের দাবিপত্র গ্রহণ করেন।
ঘটনার পর-পরই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রমিজ আলম স্কুলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে জানান, আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ২১ দফা দাবির বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
এ ব্যাপারে সাবেক শিক্ষার্থী জামিল হোসেন, ছারওয়ারুজ্জামান, মালিকি মুশফিক, আলম আমিন, সাজু আলম বলেন, আমরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রমিজ আলম স্যারের প্রতি সম্মান রেখে আজকের আন্দোলন স্থগিত করেছি। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে স্যারকে তিন দিন (৭২ ঘন্টা) সময় বেঁধে দিয়েছি। এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে সকলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা স্কুলে শাটডাউন ঘোষণা করে তা পালন করবো।
প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমরা এই বিক্ষোভ সম্পর্কে আগে থেকে কিছুই জানতাম না। তবে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে আমরা একটা সমাধান তৈরি করেছে আশা করছি অতিদ্রুত কার্যকর হবে।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রমিজ আলম বলেন, আমি শুনা মাত্র স্কুলে এসেছি। ছাত্রদের ডেকে এনে তাদের কথা ও দাবি সম্পর্কে শুনলাম। শুনে যে দাবি তাৎক্ষনিক সমাধান করা যায় তা করলাম, যে গুলো সময়ের প্রয়োজন তার সময় নিলাম, আর যা তদন্তের প্রয়োজন তা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সব সিদ্ধান্তে ছাত্ররা একমত পোষণ করে তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছে। আমরা যতদ্রুত সম্ভব তাদের দাবি আদায়ে সচেষ্ট থাকবো।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নৈপুন্য অ্যাপস দুর্নীতি, রশিদ অনিয়ম, রশিদ ছাড়া অর্থ গ্রহণ, সিসি ক্যামেরা দুর্নীতি, স্কুল চত্বরে অবৈধ হোটেল স্থাপন, টাই, সোল্ডার, আইডি কার্ড সরবরাহে অনিয়ম, এডহক কমিটি গঠনে বাধা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অর্থ আত্মসাৎ অভিযোগ, শিক্ষকের নামে নারী কেলেঙ্কারি, টিসি ও ভর্তি অনিয়ম, অনলাইন জুয়া ও ক্লাস ফাঁকি। শিক্ষকরা ক্লাস বাদ দিয়ে শিক্ষক কক্ষে অনলাইন জুয়ায় লিপ্ত থাকেন, বুকলিস্ট দুর্নীতি, স্কুলে রাত্রীযাপন ও অনৈতিক কার্যকলাপ, শ্রেণিকক্ষের অশ্লীলতা, শিক্ষিকাদের দায়িত্বহীনতা, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, বেতন অনলাইন না করা, দোকান ভাড়া বকেয়া ও অনিয়ম, চুক্তি নবায়ন না করা, পক্ষপাতমূলক বেতন ছাড়, বিলুপ্ত ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা পরিচালনা করা হচ্ছে।
এফপি/রাজ