বাংলাদেশে আধুনিক ও কার্যকর নিরাপদ খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা এবং উন্নতমানের খাদ্য পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আধুনিক নিরাপদ খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দরকার দক্ষ মানবসম্পদ। একইসাথে প্রয়োজন ভালো মানের খাদ্য পরীক্ষাগার। আমি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি, জাপান সরকার ও জাইকার সহায়তায় ঢাকায় একটি আধুনিক ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।’
সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (BFSA) আয়োজিত “Modern Food Safety System in Bangladesh” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে খাদ্য রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারায় আমরা এ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না। নিরাপদ ও মানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের রপ্তানি আয় বহুগুণে বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাপান সরকারের সহায়তায় ঢাকায় একটি আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার, অফিস ভবন এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জাতীয় রেফারেন্স ল্যাব হিসেবে কাজ করবে। একইসাথে চট্টগ্রাম ও খুলনায় বিভাগীয় ল্যাব ও কার্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে ছিলেন সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত মান্যবর মি. শিনইচি সাইদা এবং জাইকা বাংলাদেশের চীফ রিপ্রেজেনটেটিভ মি. তোমোহিদে ইচিগুচি। সভাপতিত্ব করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদুল হাসান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ।
রাষ্ট্রদূত শিনইচি সাইদা বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য খাতটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি অত্যন্ত আনন্দজনক। জাপান বাংলাদেশে বহু বছর ধরে অবকাঠামো, কৃষি ও জ্বালানি খাতে কাজ করছে, এখন খাদ্য নিরাপত্তাও তার অংশ।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে একক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন এবং সমন্বিত কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাপান সরকার একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে যার আওতায় খাদ্য পরীক্ষাগারগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সেইসাথে প্রযুক্তিগত সহযোগিতাও চলছে।'
খাদ্যসচিব মাসুদুল হাসান বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদি ও আংশিক সমাধান যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন একটি পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা।’ তিনি বলেন, BFSA এবং জাইকার STIRC প্রকল্প এই লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া জাইকা ও জাপান সরকারের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মূল প্রবন্ধে মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ জানান, প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করে অসুস্থ হচ্ছেন। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত না করতে পারলে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি আধুনিক খাদ্য ব্যবস্থাপনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ী সংগঠন, দাতা সংস্থা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
এফপি/এমআই