চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও ডলার সংকটের চাপ সত্ত্বেও খাতটি বছরের শেষে রফতানি আয় করেছে ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। যদিও সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রাপ্ত আয়ে ১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি রয়ে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি এই খাতের সক্ষমতা এবং প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।
রফতানির দিক থেকে নিটওয়্যার খাত সবচেয়ে এগিয়ে। এই খাত থেকে আয় এসেছে ২১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার, যা ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। উৎপাদন দ্রুততা, তুলনামূলক কম খরচ ও ইউরোপীয় বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিই এই প্রবৃদ্ধির পেছনে মূল চালিকাশক্তি।
ওভেন খাত থেকেও এসেছে ১৮ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার, যা ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। তবে এই খাতের প্রবৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত কম হলেও তা একটি ইতিবাচক প্রবণতার দিকেই ইঙ্গিত করে।
অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রফতানির গতি হঠাৎ কমে যায়। মাসটিতে রফতানি হয়েছে ২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ কম।
নিটওয়্যার রফতানি কমেছে ৪ দশমিক ০৪ শতাংশ, দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে। ওভেন খাতে পতনের হার আরও বেশি—৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ, রফতানি হয়েছে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।
এই পতনের পেছনে একাধিক কারণ দায়ী: ঈদের ছুটিতে উৎপাদন স্থবিরতা, কাস্টমসের ধর্মঘট, আন্তর্জাতিক বাজারে অর্ডার কমে যাওয়া, এবং কাঁচামাল ও ডলারের সরবরাহ সংকট।
২০২৪–২৫ অর্থবছরে মাসভিত্তিক রফতানির চিত্র ওঠানামাময় ছিল। অক্টোবর ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল মাস—নিটওয়্যার খাতে প্রবৃদ্ধি ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, ওভেনে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ডিসেম্বর ও মে মাসেও প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৪৫ ও ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে এপ্রিল ও ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত নিম্ন। এপ্রিল মাসে মোট প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৈচিত্র্য খাতটির স্থিতিশীলতা অর্জনে এখনও কিছুটা সময় লাগবে।
২০২৩–২৪ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় ছিল ৩৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ২২ শতাংশ কম। সেই ধাক্কা কাটিয়ে নতুন অর্থবছরে ঘুরে দাঁড়ানোর স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে খাতটি।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল মনে করেন, “বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বাড়লেও বাংলাদেশের পোশাক খাত তার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। তবে এই গতি ধরে রাখতে হলে প্রযুক্তির ব্যবহার, কর্মী দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জুন মাসের পতন আমাদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। নীতি সহায়তা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং রফতানিকারকদের জন্য প্রণোদনা ছাড়া সামনে টিকে থাকা কঠিন হবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ রফতানির জন্য যে কয়টি দেশে নির্ভরশীল, সেগুলোর বাইরেও নতুন বাজারে প্রবেশ জরুরি। একই সঙ্গে পণ্যের বহুমুখীকরণ ও উচ্চমান নিশ্চিত করতে হবে।
রফতানির এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে এখনই সময় কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণের। তা না হলে জুন মাসের ধাক্কা ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট তৈরি করতে পারে।
এফপি/রাজ