রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মামলায় সাত আসামির মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। ২২৯ পৃষ্ঠার এই পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছে, আসামিরা হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, ফলে সরাসরি হত্যাকাণ্ডের দায়ে মৃত্যুদণ্ড উপযুক্ত ছিল না।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঘটে যাওয়া এই হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে কমান্ডো অভিযানে ঘটনাস্থলে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারী। ঘটনার পরদিন গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে খালাস দেন। পরে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয় এবং ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে তাদের প্রত্যেককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, হোলি আর্টিজান হামলায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল পাঁচজন জঙ্গি- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল এবং খায়রুল ইসলাম পায়েল। এদের সবাই ঘটনাস্থলে নিহত হয়।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তারা কেউ হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়নি। তবে তারা হামলার পরিকল্পনা, অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহ, হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ, বাছাই ও লজিস্টিক সহায়তায় জড়িত ছিলেন।
এই কারণে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(১)(ক)(অ) ধারার আওতায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া সঠিক হয়নি। বরং ৬(১)(ক)(আ) ধারা অনুযায়ী আমৃত্যু কারাদণ্ডই আইনগতভাবে যথাযথ শাস্তি।
হাইকোর্ট যাদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন, তারা হলেন: জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ, মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন।
প্রত্যেককে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছে। তবে এখনো আপিলের শুনানি শুরু হয়নি। আসামিপক্ষও উচ্চ আদালতে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এফপি/রাজ