দেশের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারী চক্র। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ অঞ্চলে এই দালালচক্র নতুন কৌশলে মানুষ পাচারের ফাঁদ পেতেছে। এবার তারা ‘এনজিও’র মিটিং’, ‘প্রশিক্ষণ’ কিংবা ‘চাকরির সুযোগ’ দেখিয়ে স্থানীয় যুবক ও কিশোরদের টার্গেট করছে এবং পরে কৌশলে পাচার করে দিচ্ছে মিয়ানমার বা মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। এইসব দালালচক্র মূলত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারকে টার্গেট করে, যাদের সামনে ‘ভালো ভবিষ্যৎ’ ও ‘উন্নত জীবনের স্বপ্ন’ দেখানো হয়।
সম্প্রতি টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং এলাকার শামসুল আলমের ছেলে রিদুয়ান, মৃত মোক্তার আহমদের ছেলে রাসেল, মুহাম্মদ হোসেনের ছেলে দেলোয়ারসহ তিনজন কিশোরকে এনজিওর মিটিংয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা প্রথমে টেকনাফের নির্দিষ্ট এলাকায় জড়ো করে। সেখান থেকে জোরপূর্বক মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে ইঞ্জিন চালিত বোটে তুলে দেয়। এরপর থেকে ওই তিন কিশোরের আর খোঁজ মেলেনি। ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিম দেলোয়ারের মা রোকিয়া বলেন, মৃত মুহাম্মদ হোছনের ছেলে আবুল কালাম, শামশুল আলমের ছেলে ইবরাহীম, ছৈয়দ হোছাইন মিন্টুর স্ত্রী রেহেনা আক্তার, মৃত কালাম হোছাইনের ছেলে নুর হোছাইন, মৃত নজুম উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন ও জিয়া উদ্দিন বাবুল, নুরুল হকের ছেলে নুর মুহাম্মদ, মৃত শফি আহমদের ছেলে আব্দুল হামিদসহ অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জন দালালচক্র মিলে কিশোরদের পাচার করে দেয় বলে অভিযোগ তুলেন। পরবর্তী সন্তানদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি দুই লাখ করে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় দালালচক্র।
টাকার নেওয়ার পরেও সন্তানদের ফিরে না পেয়ে দালালদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় অভিযোগ দায়ের করায় ভুক্তভোগী পরিবার উপর হামলা চালায় দালাল চক্র। অবশেষে নিরোপায় হয়ে ভিকটিম দেলোয়ারের পিতা মুহাম্মদ হোসেন বাদী হয়ে মানবপাচারের অভিযোগে ৮ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার মানবপাচার দমন ট্রাইব্যুনালে (৩) একটি মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে আরেক ভিকটিম রাসেলের মা বাদী হয়ে একই আদালতে ৮ দালালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী মুহাম্মদ হোসেন বলেন, মামলা করার পরে দালালচক্র আমাদের উপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে এবং মারধর করে আমার কাছ থেকে মাছ বিক্রির ৫০ হাজার টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক মানবপাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
এফপি/রাজ