কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ প্রায় শেষ পর্যয়ে। সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষ মনে করছে এই মাসের শেষের দিকে আর্ন্তজাতির ফ্লাইট উঠানামা করবে এমনটা আশা করা যাচ্ছে। সমুদ্রগর্ভে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে রানওয়ে। ধারণা করা হচ্ছে এই মাসের শেষের দিকে সাগরের নীল জল ছুঁয়ে রানওয়েতে নামবে আর্ন্তজাতিক উড়োজাহাজ। যার কারণে পর্যটন নগরীর পরিচিত হবে আরো সুন্দরভাবে।
দেশের সবচেয়ে বড় রানওয়ে, অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রে বর্তমানে এক নম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তবে শাহজালাল বিমানবন্দরকেও ছাড়িয়ে যাবে কক্সবাজার বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে কক্সবাজার বিমান বন্দরের ৯ হাজার ফুট রানওয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে আরো এক হাজার ৭ শত ফুট রানওয়ে সম্প্রসারণ হবে। আর এই ১৭ শত ফিট হবে বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী চ্যানেলের ওপরে। যেখানে থাকবে সেন্ট্রাল লাইন লাইট। এছাড়াও সমুদ্র বুকের ৯ শ মিটার পর্যন্ত হবে প্রিসিশন এপ্রোচ লাইটিং। সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে এই রানওয়েতে ওঠানামা করবে উড়োজাহাজ।
রানওয়ে পরিষেবা চালু হলে বোয়িং ৭৭৭ এবং বোয়িং ৭৪৭-এর মতো বড় উড়োজাহাজগুলো কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করতে সক্ষম হবে বলে জানা গেছে। এই রানওয়ের কাজ শেষ হলে কক্সবজার বিমানবন্দরের রানওয়ে হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে সমৃদ্ধ কক্সবাজার বিমানবন্দর। যে রানওয়ের প্রস্থ ছিল ১ শত ফুট এখন তা করা হয়েছে ২ শত ফুটে। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে দ্বিতীয পর্যায়ে বিমানবন্দরটির রানওয়ে বৃদ্ধি করা হবে আরো এক হাজার ৭ শত ফুট। যা করা হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্য। ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১০ হাজার ৫০০ ফুট। সেই তুলনায় কক্সবাজার বিমান বন্দরে হবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রানওয়ে। এর মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে দেশের ৪র্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রা শুরু করবে। রানওয়ে বৃদ্ধির কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বোয়িং-৭৭৭ পরিসরের অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলও শুরু হবে।
বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়ে আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারিত করে মোট ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। সম্প্রসারিত অংশের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুট সাগরের পানির মধ্যে। এটি দেশের ইতিহাসে প্রথম সমুদ্রের মধ্যে ব্লক তৈরি করে নির্মিত রানওয়ে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা পুরোপুরি অর্থায়ন করছে বেবিচক। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাটিকে আঞ্চলিক হাবে রূপান্তরের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে জরুরি উড়োজাহাজ চলাচলের পথ প্রস্তুত রাখাও এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। এ জন্য বর্তমানে রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পসহ নানা উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হতে চলছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে রূপ লাভ করলে এটি কক্সবাজারবাসির দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হবে বলে জানান পর্যটন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের কাজ চলতি জুনের মধ্যে শেষ করার তাগাদা রয়েছে তবে বেধে দেওয়া এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলেও সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান বেবিচক চেয়ারম্যান।
দেশের ৪র্থতম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে এটি চালু হলে সৈকত শহর কক্সবাজার বিশ্বে ব্রান্ডিং হবে একদিকে অন্যদিকে বিদেশি পর্যটকদের আগমনে পর্যটন শিল্প আরও বেশি সমৃদ্ধ হয়ে বড় পরিবর্তন আসবে দেশের অর্থনীতিতে এমনটা মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সম্প্রসারিত রানওয়ে, নির্মাণাধীন টার্মিনাল ভবন ও রানওয়ের লাইটিং সিস্টেম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া তথ্য জানান। এ সময় দ্রুত কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তিনি নির্দেশ দেন।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে আয়োজিত একটি তথ্য অধিকার বিষয়ক কর্মশালারও উদ্বোধন চলতি মাস জুনের মধ্যে নতুন টার্মিনালের নির্মাণ শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও, সময়মতো কাজ শেষ না হলে সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ইমিগ্রেশন, কাস্টমসসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে বেবিচক।
এফপি/রাজ