দুই দিন স্থবির থাকার পর রাজস্ব প্রশাসনে স্বস্তির খবর এসেছে। আন্দোলনরত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের ‘শাটডাউনসহ’ সব ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার (২৯ জুন) রাত সাড়ে ৯টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) কার্যালয়ে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জাতীয় স্বার্থ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক চলাচলের কথা বিবেচনা করে আমরা সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।”
ব্যবসায়ী মহলের দীর্ঘ সময় ধরে চলা আহ্বান, সরকারের মধ্যস্থতা এবং চলমান অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত এসেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা।
বিসিআই সভাপতি বলেন, “অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেই আমরা সকল পক্ষকে একসাথে বসিয়েছি। আশা করি এই সমঝোতার মাধ্যমে চলমান সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে।”
এর আগে শনিবার থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করলে দেশের প্রধান প্রধান বন্দর, কাস্টমস হাউজ ও কর অঞ্চলগুলোর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের সব স্থলবন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যায়, আটকে পড়ে কয়েক হাজার কনটেইনার। প্রতিদিন গড়ে ২৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য ক্ষতির মুখে পড়ে বলে জানায় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।
সরকার ১২ মে একটি গেজেটের মাধ্যমে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ—‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব প্রশাসন’—গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ সিদ্ধান্তে রাজস্ব ক্যাডারের কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হন এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নামেন।
তাদের অভিযোগ, এই কাঠামো পরিবর্তনের ফলে তারা প্রশাসন ক্যাডারের অধীনে চলে যাবেন, এতে স্বাধীনতা, মর্যাদা ও পদোন্নতির সুযোগ হুমকির মুখে পড়বে।
সরকার এ সংকট নিরসনে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে এবং এনবিআরের আওতাধীন সব দপ্তরকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এনবিআর চেয়ারম্যান এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের একাধিক দফায় আলোচনা হয়।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার ও ব্যবসায়ী মহলের যৌথ প্রচেষ্টায় আন্দোলন প্রত্যাহারের পথ তৈরি হয়।
আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণার পরপরই ব্যবসায়ী মহলে স্বস্তি ফিরে আসে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সোমবার থেকেই বন্দর ও কাস্টমস হাউজগুলোতে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, “শিল্প বাঁচাতে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন ক্ষতি পুষিয়ে ওঠাই আমাদের লক্ষ্য।”
যদিও আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে, তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন-সংস্কার দাবিগুলো এখনও বহাল রয়েছে এবং তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে এগোনো হবে।
এফপি/রাজ