আর মাত্র কিছুদিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলমান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল-আযহা বা কোরবানি ঈদ।
আর এই ঈদ-কে সামনে রেখে কাহারোলে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। পশু বেচা কেনায় হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতাদেও উপচে পড়া ভীড় পরিলক্ষিত হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার সদরে অবস্থিত কাহারোল হাটে গরু-ছাগল ও মহিষ বিক্রিতে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। কোরবানি উপলক্ষে দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী জেলা ও উপজেলার অর্ধ লক্ষ মানুষের ভীড় জমে শনিবারের দিন কাহারোলের এই হাটে।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা কোরবানির গরুর হাটের গরু ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য আসেন। তারা এই হাট থেকে পশু ক্রয় করে বিভিন্ন পরিবহনযোগে দেশের বিভিন্ন জেলা- উপজেলায় নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে গতকাল শনিবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এই হাটের পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, গরু-ছাগল ও মহিষ হাটিতে প্রায় ২/৩ একর জায়গার উপর অবস্থিত পশুর হাট।
এছাড়াও পাশের সড়কের উপর কোরবানির জন্য বিক্রি করার আশায় অনেক বিক্রেতা সকালে গরু ও ছাগল নিয়ে সকালেই হাটে পৌঁছাতে দেখা গেছে। এর ফলে শনিবার দিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৩/৪ টা পর্যন্ত কোরবানির গরু- ছাগল ও মহিষ পুরাদমে বিক্রি শুরু ও শেষ হয়ে যায়।
আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে এই হাটে গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়া বিক্রেতারা বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা বেশি ছিল চোখে পড়ার মতো।পশুর হাটে পশু কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উভয়ের মাঝে চলে এক প্রকার দরকষাকষি। এ সময় গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার বিক্রির স্থানে একেবারে পা রাখার ঠাই ছিল না।
এই কাহারোল হাটে রাজধানী ঢাকা, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালি, সিলেট, নেত্রকোণা, শেরপুর, যশোর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা কোরবানির পশু গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়া ক্রয় করার জন্য পরিবহন নিয়ে চলে আসেন দিনাজপুর জেলা ঐতিহ্যবাহী এই কাহারোলের পশু হাটে।
হাটে আসা কোরবানির গরুর হাটে গরু বিক্রয় করার জন্য ৭টি গরু নিয়ে আসেন বিক্রেতা মোঃ মাইনুদ্দীন, তিনি জানান, দুপুর ১২টার মধ্যে ৬টি গরু বিক্রি করা হয়েছে আর মাত্র ১টি গরু আছে, বিক্রয়কৃত ৬টি গরুতে আমার লাভ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো।
অপরদিকে আরেক গরু বিক্রেতা মোঃ হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা ৪ জনে ৮টি গরু নিয়ে এসেছি এই হাটে বিক্রি করার জন্য। সেগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর একটু পশুর দাম বেশি থাকায় হাটে ক্রেতারা দেখে শুনে কোরবানির জন্য তাদের পছন্দেও পশু ক্রয় করছেন।
উপজেলার ডাবোর ইউনিয়নের চামদুয়ারী গ্রামের মোঃ আনোয়ার হোসেন ৩টি গরু বিক্রয়ের জন্য নিয়ে এসেছেন এই হাটে বিক্রির জন্য। তিনি গরুগুলো বাড়ীতে লালন-পালন করেছেন কিন্তু এবার গো-খাদ্যের মূল্য বেশী থাকায় গরুতে তেমন একটা লাভ হচ্ছে না।
অপরদিকে দেশের টাঙ্গাইল জেলা থেকে গরু ক্রয় করতে আসা এক গরু ব্যবসায়ী মোঃ হাসান আলী বলেন, আমরা প্রতি বছর দিনাজপুর জেলার কাহারোল হাটে কোরবানির গরু ক্রয় করে নিজ জেলাসহ ঢাকায় বিক্রি করে থাকি। অন্য আরেকজন সিরাজগঞ্জ জেলার গরু ব্যবসায়ী জানান, এই হাট একটি ঐতিহাসিক হাট বটে, এখানে দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে কোরবানির পশু ক্রয় করার জন্য আমরা ব্যবসায়ীরা এসে থাকি।
এই উপজেলার কাহারোল হাটে প্রচুর পরিমাণে ছোট, বড় ও মাঝাড়ি ধরনের গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়া পাওয়া যায়। তারা আরো জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর পশুসমূহের দাম একটু বেশী। কাহারোল হাটের ইজারাদার শ্যামল রায় জানান, কাহারোল গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার হাটে অনেক ঐতিহ্যবাহী ও সুনাম রয়েছে পূর্ব থেকে আজ পর্যন্ত।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু ব্যবসায়ীরা এখানে গরু, মহিষ, ছাগল ক্রয় করতে আসেন প্রতি শনিবারের দিন। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাক্তার মোঃ আবু সরফরাজ হোসেন জানান, শনিবার দিন কাহারোল হাটে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতালের স্টার্ফরা গরুর হাটের ভিতরে গিয়ে তারা কোরবানির জন্য গাভী গরুর প্যার্গনেন্সি ও বিভিন্ন রোগবালাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। কোন গরু অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন।
কোরবানির পশুর হাট বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, গরুর হাটে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন উপজেলা প্রশাসন। আমি নিজেই সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। দূর-দূরান্ত থেকে আসা কোরবানির পশু ক্রেতাদের যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয়, সেই দিকে নজরদারী রয়েছে প্রশাসনের। এই গরুর হাটে কোরবানির সময় ২০ হাজারেও অধিক গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়া বিক্রি হয়ে থাকে।
এফপি/রাজ