চট্টগ্রাম-১৪(চন্দনাইশ–সাতকানিয়া আংশিক) আসনে দীর্ঘদিন ফাঁকা থাকা আসনের জন্য অবশেষে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দলটি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আহমদকে তাদের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে। প্রার্থী ঘোষণার পরপরই বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দেয়।
বিএনপির ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, জসিম উদ্দিন আহমদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাঁদের সঙ্গে থাকা জসিম উদ্দিনের বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁরা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রভাব ও সহায়তায় জসিম উদ্দিন রাজনীতিতে এগিয়ে এসেছেন।
জানা যায়, জসিম উদ্দিন আহমদ ২০২৪ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগপন্থী নেতাকর্মীদের সমর্থনেই তিনি জয়ী হন—এমন অভিযোগ করেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর বাড্ডায় সংঘটিত এক হত্যাচেষ্টা মামলায় জসিম উদ্দিন আহমদকে আসামি করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায় গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে, যাতে একজন যুবক দুই চোখে অন্ধ হয়ে যান। ওই মামলায় জসিমকে ২১ নম্বর আসামি করা হয় এবং গত বছরের (৪ ডিসেম্বর) তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।
জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে একাধিক ঋণখেলাপির মামলাও রয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের একটি মামলায় তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতে ঋণের টাকা পরিশোধের প্রমাণ হিসেবে দেওয়া একটি পে-অর্ডারের ফটোকপি পরে জাল বলে প্রমাণিত হয়। এর পর হাইকোর্ট তাঁর জামিন বাতিল করেন।
মনোনয়ন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা। তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন ও দমন-পীড়নের মধ্যেও যাঁরা এলাকায় বিএনপিকে সংগঠিত করেছেন, তাঁদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ীকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা এই মনোনয়ন বাতিল করে দলের পরীক্ষিত নেতাদের মধ্য থেকে প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা জসিম উদ্দিনের পক্ষে অবস্থান নেন। তাঁদের দাবি, জসিম উদ্দিন কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি একজন ব্যবসায়ী হওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর পরিচয় থাকতে পারে। প্রার্থী ঘোষণার পর রাতে তাঁর সমর্থকেরা চন্দনাইশ এলাকায় আনন্দ মিছিলও করেন।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জসিম উদ্দিন আহমদের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এফপি/জেএস