আজ ৭ ডিসেম্বর, মাগুরা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ও মরণপণ লড়াইয়ে পাকহানাদারমুক্ত হয় তৎকালীন মাগুরা মহকুমা। গোটা শহর মুখরিত হয় বিজয়ের উল্লাসে, প্রকম্পিত হয় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে।
৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই মাগুরায় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। নোমানী ময়দান ও ওয়াপদা ভবন ছিল প্রতিরোধ যুদ্ধের কেন্দ্র। কিন্তু ২৩ এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত পাক সেনারা মাগুরায় প্রবেশ করলে মুক্তিযোদ্ধারা ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হন। এরপর পাকবাহিনী পিটিআই ভবন, ওয়াপদা ভবন, সরকারি স্কুল-কলেজ ও আনসার ক্যাম্পে ঘাঁটি গড়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়।
এই পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ যুদ্ধে সংগঠিত করে। শ্রীপুরের আকবর হোসেন মিয়ার শ্রীপুর বাহিনী, মহম্মদপুরের ইয়াকুব বাহিনী, কমল বাহিনী, খন্দকার মাজেদ বাহিনী এবং লিয়াকত হোসেনের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী—সবাই প্রাণপণ যুদ্ধে অংশ নেন। একের পর এক গেরিলা আক্রমণে পাকবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে।
গেরিলা বাহিনীর ধারাবাহিক ও সংগঠিত আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী এক পর্যায়ে পিছু হটতে শুরু করে। বিশেষ করে শ্রীপুর বাহিনীর টানা আক্রমণ হানাদারদের তটস্থ করে তোলে। মুক্তিযোদ্ধারা মাগুরার শ্রীপুর, মহম্মদপুর, বিনোদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরোচিত যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এতে শ্রীপুর ও শৈলকূপা থানা মুক্ত হয় এবং একাধিক সম্মুখযুদ্ধে বহু পাকসেনা ও রাজাকার হতাহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভারতের রানাঘাট যুব ক্যাম্পের ইনচার্জ ও সাবেক এমপি আছাদুজ্জামান এই সময়ে মাগুরার মুক্তিবাহিনীকে দিকনির্দেশনা, যুদ্ধাস্ত্র ও রসদ সরবরাহ করে লড়াইকে আরও বেগবান করেন।
৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর বিমান হামলা এবং মুক্তিবাহিনীর স্থল আক্রমণে পাক সেনারা মাগুরা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। ৭ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিবাহিনী বিজয়ধ্বজা উড়িয়ে শহরে প্রবেশ করে এবং পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেদিন বিকেলে সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আছাদুজ্জামান ও মিত্রবাহিনীর সেনাপতি মেজর চক্রবর্তী মাগুরায় আনুষ্ঠানিকভাবে মাগুরাকে পাকহানাদারমুক্ত ঘোষণা করেন—নোমানী ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে।
এদিকে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ও আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছে মাগুরাবাসী।
এফপি/এমআই