দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)–এর চট্টগ্রাম রিজিওন আজও নেতৃত্ব দিচ্ছেন একাধিক মামলার আসামি দেলোয়ার হোসেন। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, বিদেশে পাচার, ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি থেকে শুরু করে দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ থাকলেও তিনি বহাল তবিয়তে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যবসায়ী সমাজে এ ঘটনা বিস্ময় ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
গত ১৭ জুলাই ঢাকার সিএমএম আদালতে দায়ের হওয়া সিআর-১৪১/২৫ মামলায় দেলোয়ারকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলাকারী মো. আমানুল্লাহ ও মো. আব্দুর রহমান অভিযোগ করেন, দেলোয়ার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র”-এর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও আনা হয়েছে। কয়েক দিন পরই, ২৩ জুলাই, সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) মনিরুল রহমান আরও একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি নম্বর ৩৭৬/২৫, যেখানে অভিযোগ করা হয়, দেলোয়ার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। দুটি মামলিই এখনো বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।
দেলোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে সক্রিয় ছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের ছায়াতলে থেকে তিনি রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করার পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনের ভেতরেও শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। একাধিক মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রভাব ও যোগসূত্রের কারণে তিনি বারবার দায়মুক্তি পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়েও রিহ্যাব চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকতে পেরেছেন তিনি।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মহল বিষয়টিকে গভীর উদ্বেগের চোখে দেখছেন। তাঁদের মতে, দেশের একটি শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের চেয়ারম্যান যদি সাজাপ্রাপ্ত আসামি হন, তবে তা কেবল সংগঠনের ভাবমূর্তিকেই কলঙ্কিত করে না, বরং পুরো ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে করে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক আস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংগঠনের শীর্ষপদে বহাল থাকা আইনের পরিপন্থী। এটি বিচারব্যবস্থার দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে আসে এবং সাধারণ মানুষের কাছে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের ভেতরে যখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, তখন একজন বিতর্কিত ব্যক্তি কীভাবে রিহ্যাবের মতো প্রভাবশালী সংগঠনের নেতৃত্বে বহাল থাকতে পারেন, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়েও দেলোয়ার হোসেনের রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনের চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকা শুধু আইনের শাসন নয়, দেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী সংস্কৃতির জন্যও অশনি সংকেত। সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিশ্লেষক—সবাই এখন প্রশ্ন তুলছেন, দেশে কি সত্যিই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নাকি এখনও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে আইন অসহায়?
এফপি/এমআই