কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত ডিসি গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ছিল ১২ সেপ্টেম্বর। ফাইনালে ছিল রামু উপজেলা ও টেকনাফ উপজেলা। আগের দিন রাত থেকে খেলা দেখতে দর্শকরা আসতে শুরু করে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। পরের দিন ঠিক সময়ে খেলা শুরু হওয়ার কথা। সব ঠিকঠাক তো চলছিল। খেলা দেখার জন্য ক্রীড়া পাগল দর্শক এমনভাবে উপছে পড়বে জেলা প্রশাসন বা খেলা পরিচালনা কমিটি কল্পনাও করতে পারেনি হয়ত। যে স্টেডিয়ামে ১০ হাজার মানুষের স্থান হওয়ার কথা সেখানে লাখো দর্শক হওয়ার কারণে খেলা কামিটি হিমশিম খেয়ে যায়।
দর্শকরা জায়গা না পেয়ে গেট ভেঙ্গে মাঠে চলে যায়। দর্শকদের সামলাতে না পেরে খেলা শুরু হতে দেরি হওয়ার কারণে খেলা পাগল দর্শকরা আরো উত্তেজিত হয়ে পড়ে। একসময় দর্শকরা স্টেডিয়ামের গ্যালারি, অফিস করতে শুরু করে। সেনাবাহিনী, র্যাব পুলিশ,ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক আসার পরেও দর্শকরা থামেনি ভাংচুর করা। এক পর্যায়ে খেলা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন খেলা পরিচালনা কমিটি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ঘিরে কক্সবাজার স্টেডিয়াম ভাংচুরের ঘটনায় প্রায় ৩৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা ক্রীড়া অফিসার। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদন এবং আরো কিছু আনুষাঙ্গিক ক্ষতি মিলিয়ে প্রায় ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান জেলা ক্রীড়া অফিসার ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।
এদিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরো বেশি দাবী করে দ্রুত স্টেডিয়াম সংস্কারে অর্ধতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা সহ ১২ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলাকারী সহ মূল অপরাধীদের বিচার দাবী করেন জেলার সর্বস্তরের ক্রীড়ামুদিরা।
কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া অফিসার ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, ১২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলাকে ঘিরে উত্তেজনা এবং স্টেডিয়াম ভাংচুরের ঘটনায় কক্সবাজার গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ডেকোরেশনের চেয়ার সহ বিভিন্ন মালামাল হারিয়ে যাওয়া এবং ভাংচুরের ঘটনায় তারা ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে। এছাড়া সাউন্ড সিন্টেম ভাংচুরের কারনে প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে চিঠি দিয়েছি সে হিসাবে প্রায় ৩৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বাস্তবে কাজ করতে গেলে এটা আরো বাড়তে পারে।
এ সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ সভাপতি অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারি প্রতিবেদনে ক্ষতির পরিমান কম দেখানো হয়েছে আমাদের মতে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেটা কাজ করতে হলে বুঝা যাবে। ইতি মধ্যে মাঠ এবং গ্যালারীর কারনে আমাদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে,তাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সহ সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা দাবী করছি দ্রুত কক্সবাজার স্টেডিয়াম সংস্কার করা হউক। একই সময় তিনি বলেন, ১২ সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে কোন ভাবে হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না,এটা কক্সবাজারের ক্রীড়াঙ্গণের জন্য কালো অধ্যায়, আমি মনে করি স্টেডিয়ামের বর্তমান কমিটি এই দ্বায় এড়াতে পারেনা,অবশ্যই তাদের জবাবদিহি করতে হবে। একই সাথে টিকিট বানিজ্যে যারাই জড়িত তাদের কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। প্রতিটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা দরকার।
আরেক সহ সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, ডিসি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সফল করার জন্য একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিক ফাইনালের আগে সেই কমিটি বাতিল করেছিল বর্তমান কমিটি সে দ্বায় কিভাবে এড়াবে তারা। আর ফাইনাল খেলার দিন দুপুর ১২ টা পর্যন্ত শুধু মাত্র কয়েকজন আনচার সদস্যকে দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে। হাজার হাজার মানুষ সামাল দিতে সদস্য সচিব কেন পুলিশ আগে আনেনি ? আর জেলা প্রশাসক নিজেকি এই দ্বায় এড়াতে পারবে। আমি মনি করি সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ সভাপতি আবছার উদ্দিন বলেন, খেলার আগের দিন থেকে অনেক দর্শক এসেছে সেটা প্রচার হয়েছে। সকাল থেকে হাজার হাজার দর্শক মাঠের ভেতরে বাইরে ছিল,তাহলে কেন আইনশৃংখলা বাহিনী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি। আর গ্যালারী যখন ভরে গেছে,তখন টিকিট বিক্রি কেন বন্ধ করা হলো না, আমি মনে করি প্রশাসন এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর অবহেলার কারনে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। স্টেডিয়ামে যারা তান্ডব চালিয়েছে ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর সর্বপরি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলা হলেও আমার মতে সেটা ৫০ লাখের বেশি হবে। তবে এখন আমাদের প্রত্যাশা দ্রুত স্টেডিয়াম সংস্কার করে আগের মত খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।
এফপি/অআ