বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে। প্রায় এক দশক ধরে চলা এই আন্তর্জাতিক আইনি লড়াইয়ে এবার ফিলিপাইনের আদালত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) রাখা ৮১ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সিআইডি নিশ্চিত করেছে, বাজেয়াপ্ত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন খান বলেন, “এই অর্থ ফেরত আনার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ফিলিপাইন সরকারও ইতিবাচক সহযোগিতা করছে।”
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার সুইফট সিস্টেম হ্যাক করে সরিয়ে নেয় হ্যাকাররা। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কা হয়ে যাওয়ার পথে আটকে যায় এবং ফেরত আনা হয়। কিন্তু ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনে গিয়ে ক্যাসিনো চক্রের মাধ্যমে পাচার হয়ে যায়।
বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনে মামলা চালিয়ে আসছে। ২০২৩ সালে নিউইয়র্ক স্টেট কোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে রায় দিয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে, আরসিবিসি ইচ্ছাকৃতভাবে হ্যাকারদের সহায়তা করেছে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে ফিলিপাইনের আদালত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় অর্থ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “এই রায় আমাদের একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। বাজেয়াপ্ত মানে এটা তাদের সম্পদ নয়। আমরা বিশ্বাস করি, পুরো অর্থ ফেরত আনা সম্ভব।”
তবে অর্থ ফেরত আনার পথ এখনো সহজ নয়। বাজেয়াপ্ত মানেই সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে টাকা চলে আসা নয়। এর জন্য দুই দেশের আদালতের মধ্যে আইনি সহায়তা চুক্তি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
আরসিবিসি ইতোমধ্যে আপিল করেছে। আপিল প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলে অর্থ ফেরত আসতে আরও সময় লাগতে পারে। আবার সমঝোতা হলে তুলনামূলক দ্রুতই ফেরত পাওয়া সম্ভব।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখনো প্রায় ৬৬ মিলিয়ন ডলার ফেরত আসেনি। এ অর্থ ফেরত আনা গেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে তাৎক্ষণিক স্বস্তি আসবে। যদিও পরিমাণ তুলনামূলকভাবে সীমিত, তবে প্রতীকী দিক থেকে এটি বড় অর্জন হবে।
তাদের মতে, এই প্রক্রিয়ার সফল সমাপ্তি আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যতে মানি লন্ডারিং ও সাইবার নিরাপত্তা মোকাবিলায় অন্য দেশগুলোর কাছেও একটি নজির তৈরি করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি ও বিএফআইইউ একসঙ্গে কাজ করছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফিলিপাইনের বিচার বিভাগ বিনা খরচে মামলা পরিচালনার সুযোগ দিচ্ছে, যা প্রক্রিয়াকে দ্রুত এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
এফপি/রাজ