Dhaka, Monday | 8 September 2025
         
English Edition
   
Epaper | Monday | 8 September 2025 | English
‘মাশরুম লাঞ্চ’ হত্যাকাণ্ড, এরিন প্যাটারসনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
নির্বাচনকালে তথ্যে প্রবাহে গণমাধ্যমকে বাধা দেওয়া হবে না: মাহফুজ আলম
আ.লীগ নেতার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা, স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
শিরোনাম:

দেশে প্রথমবারের মতো দেখা মিলেছে বটবৃক্ষের আদলে অস্বাভাবিক শতবর্ষী নিম গাছ।

প্রকাশ: রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৪:৫২ পিএম আপডেট: ০৭.০৯.২০২৫ ৫:০২ পিএম  (ভিজিটর : ৫৫)

নিম গাছ একটি ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস সবই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। একটি পরিণত নিম গাছের গুঁড়ি আসবাবপত্র, জানালা দরজার কাঠামো তৈরিতেও ব্যবহার হয়ে থাকে । নিমের পাতা থেকে বর্তমানে প্রসাধনীও তৈরি হচ্ছে। নিমের এই গুণাগুণের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‌গাছটিকে 'একুশ শতকের বৃক্ষ ' বলে ঘোষণা করেছে। সেই নিমগাছের অস্বাভাবিক আকার ও সাইজের একটি গাছের দেখা মিলেছে সাভারে।

বাংলাদেশে শতবর্ষী ও বিশাল আকারের আমগাছ, বটগাছের দেখা মিললেও এবার নতুন করে দেখা মিলেছে শতবর্ষী বিশাল আকারের বটগাছ সাদৃশ্য নিম গাছের।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রিন্সিপাল এক্সপেরিমেন্টাল অফিসার, মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার গাছ নিয়ে কাজ করার দীর্ঘ কর্মযাত্রায় অভিজ্ঞতার আলোকে নিশ্চিত করেছেন যে, বট বৃক্ষের আদলে এত বড় নিম গাছ বাংলাদেশের কোথাও এর আগে তিনি দেখতে পাননি। তার কাছে মনে হয়েছে এই গাছটি বাংলাদেশের মধ্যে পাওয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ও অধিক বয়সী নিম গাছ। 

প্রায় তিন বিঘা জুড়ে শতবর্ষী এই বিশাল অস্বাভাবিক নিম গাছটির দেখা মিলেছে রাজধানী ঢাকা লাগোয়া সাভার উপজেলার, কাউন্দিয়া ইউনিয়নের, মাঝিরদিয়া গ্রামে।
গ্রামের কেউ কেউ বলছে এক হাজার বছর আবার কেউ বলছে ৫ শত বছরের বেশি হবে গাছটির বয়স। অনেকে আবার বলছেন এই গাছটির বয়স বলতে পারবে না কেউই। পূর্বপুরুষরা জন্ম থেকেই দেখছে গাছটিকে একই রকম। প্রায় তিন বিঘা জায়গা নিয়ে কান্ড ছড়িয়ে আছে নিম গাছটির। যা একটি বিরল ঘটনা এবং এর আগে বাংলাদেশের কোথাও এরকমটি দেখা যায়নি বলে দাবি করছেন এলাকাবাসী। দেশি নিম গাছের এরকম বড় ও এত বয়স হওয়ার বিষয়টি নতুন করে যেই দেখছেন সেই অবাক হচ্ছেন।


উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে একটি নিম গাছ সাধারণত ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এর কাণ্ডের ব্যাস ৪০-৫০ সেন্টিমিটার অর্থাৎ ২০-৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। দেশি নিম গাছগুলো সাধারণত এর থেকেও কম লম্বা এবং কম ব্যাসার্ধের হয়ে থাকে। কিন্তু মাঝিরদিয়া গ্রামের দেশি নিম গাছটি সাধারণ নিম গাছের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেশি মোটা ও লম্বা। গাছটির ব্যাস (মোটা) আছে ১৭ ফুট যা অবাক করে দিচ্ছে সবাইকে। গাছটিকে নিয়ে গ্রামবাসীর মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে নানান গল্প। কেউ বলছেন গাছটি কাটতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু গাছটি কাটতে এসে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গাছের কান্ড বা ডাল পালা কাটতে গিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে, এমন গল্পও আছে অনেকের মুখে। গাছটিতে আধ্যাত্মিক বা অসরুরি কিছু আছে বলে দাবি গাছটির আশেপাশে থাকা এলাকাবাসীর। কথিত আছে কারো কারো সাথে দেখাও দিয়েছে সেই অসরুরি দেও দানব। এখানে বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি। তাদের বেশিরভাগ মানুষের পূর্ব ও বর্তমান পেশা জাল দিয়ে মাছ ধরা। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী নিম গাছটিতে নিয়মিত ভোগ বা পূজা করে থাকেন। এই নিম গাছটির নিচে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি মন্দির। নিম গাছটির নামেই নামকরণ করা হয়েছে মন্দিরের। যা নিমতলী কালীমন্দির নামে পরিচিত।

১০৪ বছর বয়সী মঙ্গল রাজবংশী বলেন, "আমার বয়সে দেখছি গাছটা তহন এর থাইকা আরেকটু চিকন আছিলো, প্রায় দুইশ বছর হইবো গাছের বয়স। এইটার ডালা কাইটা মানুষ মরছে। মুসলমানরা ডালা কাটছিলো, কাইটাই মরছে। ওইটা কাইটা নামলো তারপরেই মারা গেলগা। বাড়ির উরপে গেছিলো গাছের ডাল। এহন আর কাটে না। কারেন্ট আলারাও (বিদ্যুৎ অফিসের লোক) ভয় পায় এহন, কাম করতে আইলে তারাও ভয় পায় এহন"।
৮১ বছরের সুধীর রাজবংশী বলেন, "আমি জন্মেবার আগে থেকেই এই নিম গাছ। জন্মের পর থেকেই দেখছি এইরকমই। এইটা মন্দিরের জায়গায়"। গাছটি কেউ কাটার চেষ্টা করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা দেখি নাই, আমাগো আগেও কেউ দেখে নাই গাছ কাটতে। গাছ কাটতে গেলে সমস্যা হইতেই পারে। আমার বয়সে আর কোথাও এত বড় নিম গাছ দেখি নাই'।

সুধীর রাজবংশীর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যবয়সী আরেক এলাকাবাসী বলেন, "আমাদের গ্রামের শামচান মাদবরের বয়স যখন ৬-৭ বছর তখন তার দাদুরা আলাপ কোইরা গেছে এই নিম গাছের বয়স প্রায় ৫শ বছর হোইবো। এই নিম গাছটা আমাগো জন্ম থেইকা দেখতাছি এই মতেই আছে। আর এই গ্রামের আরো আগে যারা ২শ ৩শ বছর আগের ময় মুরুব্বীরা গেছেগা, স্বর্গবাসী হইছে, তারাও এই নিম গাছ এই মতই দেখছে। আর আমরাও এই যে, অদ্যবধি আমার একাত্তরে জন্ম আর এখন ২০২৫ চলছে আমরা এই নিম গাছ এই মতই দেখছি। ২শ ৩শ বছর আগে যারা দেখছে তারাও আমাদের কাছে বইলা গেছে এই নিমগাছ অনেক পুরাতন। আর নিম গাছের যে ডালপালা ছরাইছে প্রায় এক বিঘা জায়গা লইয়া গোড়াডাই আছে দশ থেইকা তের শতাংশের মধ্যে"।

৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধা প্রমিলা বলেন, ''বাবা এইডার (নিম গাছটির) চাইর পুরুষ গেছেগা। আমরা ছোট থাইকাই দেখছি এইডা এইরহম'।
গাছটি নিয়ে কোন ঘটনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ''ঘটনাটা একটা নাটকের মতন, এইহানে আছিলো একটা ফালু কইরা নাম, ঐহান দিয়া (গাছের গোড়ায় হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন) একটা জঠা (শিকর) আছিলো উচা, ট্যাম (লাফ) দিয়া যাওয়া লাগতো। তারা এইডা কাটাইছিলো। তার কারণে তার বংশই শ্যাষ, কিছুই নাই, কিছু নাই বংশই শ্যাষ। আবার আছিলো (নিম গাছের সামনের দিকে একটি বাড়িতে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললেন) এই ভিটায় করম আলী হাজীসাব, হাজীসাব আছিলো হ্যায়। হ্যায় কি করল, কাইলাপুর থেইকা কাঠুরিয়া আনছিল এইটা কাটবার লাইগা। কাঠুরিয়া বিরাট বিরাট করাত নিয়ে আইছিলো, তারা লাল কাপড় পিন্দা চাইরোমুড়াদিয়া (চারপাশ দিয়ে ) ঘুইরা সেলাম কোইরা গেলো গা। কয় এইটা আমগো দাঁড়াতে (আমাদের দিয়ে ) চলবোনা ( কাটা সম্ভব না )। গেলোগা হেরা। তারপরের দিন কি করলো! হ্যায় বারান্দায় বইসা নলা আলা হুক্কা আছিলো টানতাছে খুটখুটাইয়া খাইতাছিলো। তারে কি করলো ! কোলে কইরা আইনা এইহানে (হাত দিয়ে গাছের গোড়ায় ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললেন) ধুপ্পুর কইরা ফালাইয়া দিল।

অহনে হ্যায় জ্ঞান হারা। পরে তার বউ আছিল হাজী সাব, হ্যায় আইসা কি অইলো, কি অইলো, পানি পুনি ঢাইলা ঠিক করলো। পরে হ্যায় কইল (করমআলি হাজি বললো) শিগগিরি মানত করো এইহানে ( হাত দিয়ে গাছের গোড়ায় ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বলল) নাইলে আমি বাচুম না। পরেআলা (তার পরে) দুধ কলা মিষ্টি আইনা দিল ওহানে, ( নিম গাছের নিচে ইশারা দিয়ে বলল), মাপ নিয়া গেল, পরে অনেক বছর বাইচা( জীবিত থেকে) গেছে হ্যায়। আবার গিয়া আরো একটা চৌকিদার আছিলো মেলারট্যাগের( একটি মহল্লার নাম মেলারট্যাগ), পাহারা দিতো। পাহারা দিতে আইছিল বিহান রাইতে (ভোর রাতে)। এইহানে আমরা নিজেই সব জানি, পাহারা দিবার আয়ছিলো এই জঠের ( গাছের শিকড়ের ) মধ্যে উস্ঠা খাইছিলো (হোঁচট খেয়েছিল) একটা ব্যাবান্ডো বকা দিছাল ( খারাপ গালি দিয়েছিল )। বকা দেওন মাত্র, পাহারা দিয়া আবার ফিইরা আইতের সোমে, ওই সময় তার সামনে ( কোন একটা দেও দানব বুঝিয়েছেন )খারাইছিলো (দুই হাত দুদিকে প্রসারিত করে দেখাচ্ছিলেন) তার সামনে খারাই ছিল, হ্যায় তো মইরা যায়''।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুন বলেন, "গাছটি বিরল প্রজাতির একটি দেশি নিম গাছ। আমরা চাই এ ধরনের নিম গাছ টিকে থাকুক। আমার ব্যক্তিগতভাবে এখন একটি প্ল্যান আছে এই গাছটির যত বীজ আছে বীজগুলো সংরক্ষণ করে এটার জাত এর সংরক্ষণ করা। এবং এই চারা উৎপাদন করে আমরা কৃষকের মাঝে বিতরণ করতে চাই এবং ব্যক্তিগতভাবেও আমি আমার বাড়িতে এই গাছটি সংরক্ষণ করতে চাই। এছাড়াও এই গাছের কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হলে সেটাও আমরা মনিটরিং এ রাখছি এবং আমাদের মাঠকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে দিচ্ছি। গাছটির মূলত ১৭ ফিট ব্যাস এবং মোটামুটি ৩ বিঘা জায়গা জুড়ে এটা ডালপালা ছড়িয়ে আছে। এটার বয়স আনুমানিক লোকোমুখি শুনে জানতে পারলাম প্রায় ৩শ বছরের কাছাকাছি কেউ কেউ আরো বেশি বলছেন। গাছটির ডালপালা অনেকের বাড়ি ঘরের উপরে গিয়েছে কেউ কেউ কিছুটা অসুবিধা বোধ করে আবার কেউ কেউ ডালপালা কাটতে ভয় পায়। যেহেতু গাছটি বহুবর্ষিও একটি গাছ তাই আমরা চাচ্ছি গাছটির ভ্যারাইটি সংরক্ষণ করে যারা উৎপাদনের একটি প্ল্যান হাতে নিব ইনশাআল্লাহ'।
ডালপালা কাটার ক্ষেত্রে মানুষের ভয় কেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, 'গ্রামের লোকজন বলে। আমি মনে করি এটা একটি কুসংস্কার। এটিকে কাটলে কারো কোন ক্ষতি হবে বা অমঙ্গল হবে, এই বিষয়টির সাথে গাছের কোন সম্পর্ক নেই'। এটা শুধুমাত্র লোকস্রুতি । মানুষের মুখে যেটা বলছে এটার সাথে গাছের কোন সম্পর্ক নেই'।

কাউনদিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড (মহিলা) মেম্বার লিজা আক্তার বলেন, 'আমার ওয়ার্ডের এই নিম গাছটি অনেক পুরাতন। আমি আমার বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তিনি বলেছেন তার বাবাও মানে আমার দাদা এই গাছটি এরকমই দেখেছে। প্রায় দেড় থেকে দুই'শ বছর তো হবেই। অনেক আগের, এই গাছটি এরকমই রয়েছে‌'। 'কোন কিছুই হয় না মরেও না কাটাও যায় না, মানে এটা একটা আতঙ্কের মধ্যে আছে সবাই। গাছটা ডালপালা কাটা যায় না এটা একটা আতঙ্ক। আশেপাশের অনেক বাড়ি ঘরের চালের উপরে মোটা মোটা ডালপালা ছড়িয়ে আছে। যেকোনো সময় ঝড় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এইসব বাড়ি ঘরের' । এই ডালপালা কেন কাটা যায় না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'কেন কাটা যায় না সেটা অজানা, সবার ক্ষেত্রে যেমন অজানা আমার ক্ষেত্রেও অজানা। গাছটাকে এরা পূজা করে এবং শাড়ি পরিয়ে রাখছে তারা মানে অনেক'।

কাউন্দিয়া ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রশাসক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহসিনুজ্জামান বলেন, 'ঢাকা জেলার একদম সন্নিকটে কাউন্দিয়া ইউনিয়নটি একটি দ্বীপের মতো এলাকা। এই ইউনিয়নের সাথে ঢাকা জেলা বা সাভার উপজেলায় সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। এই ইউনিয়নে হেলিকপ্টার অথবা নৌকা ছাড়া আসার কোন ব্যবস্থা নেই। এরকম একটি জায়গায় একটি ঐতিহ্য বাহী নিম গাছ আছে যার বয়স ২শত বছরেরও বেশি। আমিও এর আগে কখনো এত বড় নিম গাছ কোথাও দেখিনি। এর পূর্বে আমরা আমগাছ বটগাছ লিচু গাছ দেখেছি, কিন্তু নিম গাছ যার এরকম পরিধি এবং এরকম অধিক সময় নিয়ে বেঁচে থাকার যে বিষয়, এটি আমার জন্য এই প্রথম। এরকম একটি ঐতিহ্যবাহী বিষয় নিয়ে আমি আপনাদের ( গনমাধ্যমের) কাছে অনুরোধ করবো বিষয়টিকে কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবেন। এবং গাছটির রক্ষার্থে বা উন্নয়নে বনবিভাগের যদি কিছু করণীয় থাকে সেটা যেন করা হয়। আমি মনে করি এই গাছটি কাউনদিয়া ইউনিয়ন তথা সাভার উপজেলার একটি ঐতিহ্য। এই গাছটির বিষয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে যথাযথভাবে তুলে ধরার অনুরোধ করবো। এবং আমি মনে করি এই গাছটি ইতিহাস ঐতিহ্যে স্থান পাওয়ার মত একটি গাছ'।

 উদ্ভিদ গবেষক ও বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটির সদস্য (প্রযত্নে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের, গ্রীন মিজানুর রহমান বলেন, 'সব ধরনের নিমগাছই ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন তবে  Azadirachta indica বা দেশি নিম এটি মেলিয়াসেই (Meliaceae) পরিবারের একটি গাছ এই গাছের গুনাগুন একটু বেশি থাকে। আর পাহাড়ি নিমগাছের বৈজ্ঞানিক বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম হলো "আজাদিরচটা ইন্ডিকা" (Azadirachta indica). এই নিমগাছের গুনাগুন টা একটু পিছনে থাকবে । গাছ এবং মানুষের ক্ষেত্রে জীবনযাত্রায় আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। মানুষের ক্ষেত্রে জীবন ধারণের নির্দিষ্ট সময় থাকে কিন্তু গাছের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন আয়ুষ্কাল বা সময় থাকে না। কোন কোন প্রাণীর ক্ষেত্রে মৃত্যু নেই যেমন ব্যাকটেরিয়ার কোন মৃত্যু নেই, যেমন পান গাছেরও কোন মৃত্যু নেই, একমাত্র পুড়িয়ে ফেললে একে ধ্বংস করা যায়। যেটাকে ফোনাটিক প্রোপাগেশন বলে থাকি। একটি নিমগাছ বা বটগাছ কিভাবে বাড়ে, এর জন্য বড়ার প্রক্রিয়াটা আলাদা। মেরি এস্টিমেটিক টিস্যু বা ভাজন কলার যে কাজ তা একেক গাছের জন্য এক এক রকম। যেমন সুপারি বা নারিকেল গাছ সে চাইলেই ইচ্ছা করলে কান্ড বড় হওয়ার সাথে সাথে মোটা হবে না। কিন্তু বট গাছের কান্ড সেটা কিন্তু সারি হবে এবং কাণ্ড মোটা হবে। এবং গাছের বেড়ে ওঠার যে প্রক্রিয়া তার সাথে প্রাণ প্রকৃতির সম্পর্ক, ভূ-প্রাকৃতিক প্রতিবেশ, সব কিছুর সাথে একটা সাদৃশ্য আছে গাছের জীবনচক্রে। 

এজন্যই এই গাছটি টিকে থাকতে পেরেছে এত বছর ধরে। এখন টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে কিছু বিষয় আছে। এক হচ্ছে ভূতাত্বিক বৈশিষ্ট্য, আরেকটা হচ্ছে আশেপাশে যে সমস্ত প্রাণী আছে তাদের বৈশিষ্ট্য, আরেকটা আছে সাংস্কৃতিক কৃষ্টিগত ঐতিহ্য। যেমন নিম গাছটিকে হয়তোবা অতীতে কেউ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করেছেন, অন্যরা চান যে নিম গাছের বাতাস ভালো, গাছটি থাকলে ফসল ভালো হয়, স্বাস্থ্যকর বা এর পাতা দিয়ে ডায়াবেটিসের ওষুধ হয়। এই গাছটা ছাগল গরু খায় না, পোকামাকরে আক্রমণ করে না, গাছটির ছাল বাকল সবকিছু উপকারী, এছাড়াও অর্থকারী যোগসূত্র আছে, এ সকল বিষয় দেখে যদি কেউ এটাকে সংরক্ষণ করে থাকেন, তাহলে এই বিষয়টি একটি ঐতিহ্যগত ব্যাপার। এবং এত বছর পার হয়েছে মানে এটি একটি প্রত্নতত্ত্ব ঐতিহ্য। 

নিম গাছ একটি চিরহরিৎ ঔষধি বৃক্ষ যা মেলিয়াসি (Meliaceae) গোত্রের অন্তর্গত এটি একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। সে ক্ষেত্রে মানুষের যত্ন, সার্বিক পরিচর্যা বা সংরক্ষণ বা ধর্মীয় ঐতিহ্য হিসেবে মন্দিরের পুরোহিতরা বিষয়টিকে সংরক্ষণ করেছেন। তাহলে এটা তো প্রাকৃতিক একটি বৈশিষ্ট্য এর বড় হওয়া। এর সাথে কোন অলৌকিক কোন কিছু যোগসূত্র থাকবে না। আর যদি অলৌকিক বিষয়ের কথা বলি তারও তো একটি গুরুত্ব আছে। ধর্মীয় বিষয়েও একটি গুরুত্ব আছে'। 'গাছটি জেনেটিক ক্যারেক্টার সহ এর সার্বিক বিষয় বা প্রকৃত বয়স কত এ বিষয়গুলো জানতে আরকিউ বোটানিক (প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্ভিদবিজ্ঞান) বা ক্যালিও বোটানিক(পুরাতাত্বিক উদ্ভিদবিজ্ঞান) শাখায় যোগাযোগ করলে বয়স এবং জেনেটিক ক্যারেক্টার বলতে পারবে'।

প্রত্নতাত্ত্বিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্ভিদবিদ অধ্যাপক (জাবি) মোঃ মিজানুর রহমান (জিমি) বলেন, 'সাধারণত জীবিত গাছের বয়স নির্ণয় করা যায় না, তবে একটি পদ্ধতি আছে সেটি আমাদের দেশে সম্ভব না। এ ধরনের কোন প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে আসেনি। প্রথমত লোকশ্রুতি কথাগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। দ্বিতীয়ত এটির বয়স বের করার কোন সিস্টেম নেই। যে সিস্টেমটি আছে সেটির জন্য গাছটিকে মেরে ফেলতে হবে। গাছটি কেটে সেখান থেকে নির্ণয় করা যাবে। আরেকটি পদ্ধতি আছে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে গাছের ভিতরের বৃদ্ধির বলয় বা রিংগুলো গণনা করা সেটি বাংলাদেশে সম্ভব না, এই প্রযুক্তি আমাদের নেই। এছাড়া আরেকটি উপায় আছে, স্থানীয় বয়বৃদ্ধদের কাছ থেকে জেনে বয়স সম্পর্কে একটি ধারণা করা যেতে পারে কিংবা হিস্টোরিকাল কোন বিষয় যদি থাকে সেগুলো থেকে এটার বয়স নির্ণয় করা যেতে পারে'। 'তবে গাছটি দেখে আমার মনে হচ্ছে ১শত বছর অথবা ২শত বছর হতে পারে'।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রিন্সিপাল এক্সপেরিমেন্টাল অফিসার, মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বলেন, 'আমি বাংলাদেশের কোথাও এই ধরনের নিম গাছ দেখিনি। কারন আমি বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যন্ত সব অঞ্চলের বোন বাদারে, সমুদ্র বন্দর, সুন্দরবন সহ সবজায়গাতেই গাছের জন্য গিয়েছি। কিন্তু যেই গাছটি আমি দেখলাম এখন, এরকম বড় নিমগাছ সাধারণত দেখা যায় না। দেখে মনে হল যে এটা দেশীয় নিম গাছ এটার বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica (আজাদিরাচ্টা ইন্ডিকা), এটি আমাদের দেশীয় মেহগনি ফ্যামিলির অন্তর্ভুক্ত'। 'গাছটির কান্ড এবং গুঁড়ি দেখে বোঝা গেল যে প্রকৃত অর্থেই এই গাছটির বয়স অনেক বেশি। প্রায় দুই শতাধিক বছরের বেশি হবে বলে মনে করছি। গাছটির বয়স নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গাছের লক বা মুল ব্রাঞ্চ খুঁজে বের করে তা কেটে অ্যানুয়াল রিং পর্যালোচনা করে একটা এস্টিমেট করা যেতে পারে যে এই গাছটির বয়স কত হতে পারে। যেহেতু মানুষের একটু ধারণা আছে এই গাছের ডালপালা কাটেনা, তাদের ভিতর একটি ভয় ভীতির ব্যাপার আছে, তাই এইটা সম্ভব না। আরেকটি বিদেশী পদ্ধতি আছে সে পদ্ধতিতে গাছের অর্ধেক পর্যন্ত ছিদ্র করে একটি যন্ত্রের মাধ্যমে জানা যায় যে অ্যানুয়াল রিং কতগুলো আছে। এই পদ্ধতিতে বয়স নির্ণয় করতে গেলে বিদেশ থেকে এই প্রযুক্তি আমাদের আনতে হবে'।
"তবে গাছটিকে আরো ক্লোজ অবজারভেশন এর দরকার আছে"। বলেও তিনি মনে করেন।
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝