বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২৫ সালের স্বাধীনতা দিবস এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। বিগত বছরের ঘটনাবলি, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও কোটা সংস্কার আন্দোলন, আমাদের জাতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। এই আন্দোলন কেবল একটি প্রশাসনিক সংস্কারের দাবি ছিল না; এটি ছিল ন্যায়বিচার, সমানাধিকারের সংগ্রাম এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই।
২০২৪ সালের অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে যে দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে তরুণ সমাজ কতটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত একটি গণজাগরণে রূপ নেয়। এই আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে শত শত তরুণের প্রাণহানি ঘটেছে, হাজারো শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের চাপে সরকার কোটা সংস্কারে বাধ্য হয়েছে এবং দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটেছে।
স্বাধীনতা দিবসে আমাদের প্রত্যাশা-
২০২৫ সালের স্বাধীনতা দিবসে আমরা যে বাংলাদেশ দেখতে চাই, তা এক গণতান্ত্রিক, ন্যায়সঙ্গত এবং সমান সুযোগের দেশ। এই পরিবর্তন শুধু একটি সরকারের পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না; বরং এটি হতে হবে কাঠামোগত ও দীর্ঘস্থায়ী। আমাদের প্রত্যাশাগুলো নিম্নরূপ—
১. গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোর পুনর্গঠন
২০২৪ সালের অভ্যুত্থান দেখিয়েছে যে জনগণের আস্থা না থাকলে সরকার টিকে থাকতে পারে না। আমরা চাই, বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক, যেখানে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ এবং প্রশাসন স্বাধীনভাবে কাজ করবে।
২. ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও দোষীদের শাস্তি
আন্দোলন দমনে যারা নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি। স্বাধীনতা দিবসের মূল শিক্ষা হলো— অন্যায়কারীরা কখনো পার পেতে পারে না।
৩. বৈষম্যহীন সমাজ গঠন
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল বক্তব্য ছিল মেধার ভিত্তিতে সকলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। আমরা চাই, শুধু সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে সমান সুযোগের নীতি কার্যকর হোক।
৪.আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা
অতীতের স্বৈরাচারী দমননীতি ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া দরকার। আইনের শাসন এবং মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেন
একটি দেশের উন্নতি নির্ভর করে তার শিক্ষাব্যবস্থা ও তরুণ প্রজন্মের দক্ষতার ওপর। আমরা চাই, শিক্ষাকে আধুনিক ও কর্মমুখী করা হোক এবং উচ্চশিক্ষিত তরুণদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক।
স্বাধীনতা শুধুমাত্র একটি দিবসের আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি একটি অবিরাম সংগ্রাম, যা ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে গঠিত। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের নতুন করে শিখিয়েছে, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার অর্জন সহজ নয়, তবে এটি সম্ভব। স্বাধীনতা দিবস ২০২৫-এ আমাদের শপথ হোক— আমরা একটি ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান
এফপি/এমআই