জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনী আচরণবিধির চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করেছে। এতে বিদেশে রাজনৈতিক প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার ও ভোটের সময় ড্রোন বা এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, আচরণবিধির এই খসড়া গত মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। একই দিন সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) খসড়াও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এতে আদালত ঘোষিত পলাতক আসামিদের প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করার বিধান রাখা হয়েছে।
কী থাকছে খসড়ায়
নির্বাচনী আচরণবিধিতে এবার বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বিদেশে প্রচারণা নিষিদ্ধ: কোনো দল বা প্রার্থী দেশের বাইরে সভা, সমাবেশ বা জনসংযোগ করতে পারবেন না।
পোস্টার নিষিদ্ধ: প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহার একেবারেই করা যাবে না। রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপকরণে তৈরি লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুনও নিষিদ্ধ।
বিলবোর্ড সীমিত ব্যবহার: একটি আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে। প্রতিটির আয়তন সর্বোচ্চ ১৬ ফুট বাই ৯ ফুট।
ড্রোন ও আকাশযান নিষিদ্ধ: প্রচারণা বা ভোটের সময় ড্রোন, কোয়াডকপ্টার কিংবা হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যাবে না। তবে দলীয় প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতারা যাতায়াতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট বা প্রচারসামগ্রী বিতরণ করা যাবে না।
এআই ও সাইবার বুলিং নিয়ন্ত্রণ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মিথ্যা বা অপপ্রচার চালালে প্রার্থিতা বাতিল হবে। সাইবার বুলিং বা মানহানিকর প্রচারে ডিজিটাল আইন প্রয়োগ হবে।
শাস্তি ও জরিমানা: আচরণবিধি ভঙ্গ করলে প্রার্থীকে সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। জরিমানার সর্বোচ্চ অঙ্ক বাড়িয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
সংবর্ধনা ও সুবিধা নিষিদ্ধ: কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন থেকে প্রার্থী সংবর্ধনা নিতে পারবেন না। সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণেও সীমাবদ্ধতা থাকবে।
অঙ্গীকারনামা আবশ্যক: প্রতিটি দল ও প্রার্থীকে আলাদাভাবে ইসিতে অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হবে যে তারা সব বিধান মেনে চলবেন।
আরপিওর প্রস্তাবিত খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। পাশাপাশি নির্বাচনকালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তাকারী বাহিনী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, আচরণবিধিতে যেসব প্রস্তাব এসেছে, তার অনেকগুলো আরপিও খসড়ায়ও প্রতিফলিত হয়েছে। আচরণবিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান রাখার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়েই এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এফপি/রাজ