Dhaka, Friday | 5 September 2025
         
English Edition
   
Epaper | Friday | 5 September 2025 | English
তানোরে মহানগর ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ, ২ লাখ টাকা জরিমানা
কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার বিয়ের বাহন পালকি
জয়পুরহাটে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিহত
জাতির সেবায় আনসার-ভিডিপির ৬০ লাখ সদস্য সবসময় প্রস্তুত: মহাপরিচালক
শিরোনাম:

মব সন্ত্রাসে মৃত্যু-আতঙ্ক থামছেই না

প্রকাশ: শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৪ এএম  (ভিজিটর : ৩০)

বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হামলা বা গণপিটুনির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে মব সন্ত্রাস যেন এক নতুন সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতায় প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা শত ছুঁয়েছে, আহত হয়েছেন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মব হামলায় অন্তত ১৯৯ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ভারতের ইকনোমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হামলায় ৬৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে অভিনেতা ও সাংবাদিক- প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি আদালত প্রাঙ্গণ পর্যন্ত মব সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের সামনেই সাবেক মন্ত্রী, সাংসদ ও রাজনৈতিক নেতাদের ওপর ডিম নিক্ষেপ ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে।

চলতি বছরের জুনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা, এপ্রিল মাসে অভিনেতা সিদ্দিক এবং আগস্টে ধানমন্ডিতে রিকশাচালক আজিজুর রহমান- এমন অনেক ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

গত ৯ জুলাই ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে লাল চাঁদ সোহাগ নামে এক স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীকে গণপিটুনির পর মাথায় ভারি পাথর ফেলে হত্যা করা হয়। ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শোক ও ক্ষোভ দেখা দেয়। এর পরের মাসেই রংপুর, মাদারীপুর ও গাজীপুরে চোর সন্দেহে একাধিক গণপিটুনিতে আরও কয়েকজন নিহত হন।

বিভিন্ন ঘটনায় দেখা গেছে, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীকেই গ্রেফতার করছে পুলিশ। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা বা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়েরের নজিরও রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এতে প্রমাণ হয় দেশে আইনের শাসন কার্যত ভেঙে পড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা বলেন, “বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণ- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও বিচার না হওয়ার প্রবণতা। এই চক্র ভাঙতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে।”

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, “মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও হেয় করা হচ্ছে। সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।”

ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সহিংসতার প্রবণতা বাড়ছে। কোনো একটি ঘটনার ভিডিও বা গুজব ছড়িয়ে পড়লেই মুহূর্তের মধ্যে উত্তেজিত জনতা হামলায় জড়িয়ে পড়ছে। গবেষকরা বলছেন, অনলাইনে ভুল তথ্য রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেছেন, “রাজনৈতিক প্রতিবাদের অধিকার সবারই আছে। তবে আইন হাতে তুলে নিলে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ মনে করেন, বিচারবহির্ভূত আচরণ ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশে অরাজকতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, মব সন্ত্রাস বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে, নইলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা দুটোই হুমকির মুখে পড়বে।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝