খুলনায় জৈষ্ঠ সাংবাদিক ওহেদ-উজ-জামান বুলু আত্মহত্যাই করেছেন বলে নৌ পুলিশের তদন্তে উঠেছে। তবে কি কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সেটি উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বৃহস্পতিবার সারাদিন বুলুর আত্মহত্যার যে ভিডিওটি প্রদর্শিত হচ্ছে সেটির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে সাংবাদিক বুলুর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়ে মানববন্দন ও সমাবেশ করেছে খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন কেইউজে।
খুলনা নৌ পুলিশের এসপি ডাঃ মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে সাংবাদিক বুলু আত্মহত্যা করেছেন। তবে কি কারণে তিনি এ পথ বেছে নিয়েছেন তা এখনও পরিস্কার নয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাংবাদিক বুলুর রূপসা ব্রীজ থেকে লাফিয়ে পড়ার দৃশ্য সম্বলিত ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায় যে- বুলু ব্রীজের যেখান থেকে লাফ দিয়েছেন সেখান থেকে সোজা নীচে না পড়ে বেশ অদুরে এবং ব্রীজের ভেতরের দিকে পড়েছেন। ফলে এ ভিডিওটি নিয়ে সাংবাদিকদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নৌ পুলিশ পরিদর্শক আবুল খায়ের শেখ বলেন, ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় তিনি ব্রীজের ৪নং বেজমেন্ট থেকে লাফ দিয়েছেন। তিনি আত্মহত্যা করেছেন এটা নিশ্চিত। তবে পেছনে কি কারণ থাকতে পারে এখনও জানতে পারিনি।
ডিভোর্স হওয়া বুলুর দ্বিতীয় স্ত্রী তানিয়া সুলতানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এ তদন্ত কর্মকর্তা বলেন ওই মহিলার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে আমরা তাকে পাচ্ছি না। এছাড়া বুলু স্থানীয় সামি ক্লিনিকে ২৫ লাখ টাকা লগ্নি করেছেন কিনা জানেন না বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা। তবে এসব বিষয় জানতে একটু সময় লাগবে।
এদিকে খুলনায় জৈষ্ঠ সাংবাদিক ওহেদ-উজ-জামান বুলুর রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে অধিকতর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন খুলনার সাংবাদিক সমাজ। বৃহস্পতিবার খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে) আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচিতে বক্তারা এ দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিক বুলু যদি আত্মহত্যা করেও থাকেন তাহলে কেন তিনি আত্মহত্যা করলেন? আত্মহত্যার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে? কাদের চাপে তিনি আত্মহত্যা করলেন? কারা বুলুর মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছে ইত্যাদি বিষয়গুলো তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ মনে করেন এটি কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। সম্প্রতি খুলনার নদ-নদীতে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা বাড়ছে। উদ্ধার হওয়া লাশ সনাক্ত করা যাচ্ছে না। এমনি কি কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে সে রহস্যও উদঘাটন করতে পারছে না পুলিশ। বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে, অথচ সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার হচ্ছে না।
সাংবাদিকসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তসহ বিচার দাবি করে বক্তারা বলেন, সাংবাদিক বুলু আত্মহত্যা করার মতো মানুষ নন। তাকে হত্যা করা হয়েছে অথবা আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। বুলুর লাশ উদ্ধার করার পর লবণচরা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এ মামলার তদন্ত করছেন নৌ-পুলিশ। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি তদন্ত চলছে ধীরগতিতে। কাজেই আমরা দাবি করবো খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পিআইবি, র্যাব এবং সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা যেন ছায়া তদন্ত করে নৌ-পুলিশকে সহযোগিতা করে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বুলুর মৃত্যুর নেপথ্যের কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন নেতৃবৃন্দ।
বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবের সম্মুখ সড়কে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন কেইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম।
কেইউজের সহ-সভাপতি কাজী শামিম আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্রনাথ সেনের সঞ্চালনায় সংহতি প্রকাশ বক্তৃতা করেন, বিএফইউজে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম-মহাসচিব হেদায়েত হেসেন মোল্লা, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন, খুলনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি মোস্তফা সরোয়ার, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য কৌশিক দে বাপী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি রাশিদুল ইসলাম, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম কাজল, খুলনা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুল, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা, খুলনা টিভি রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি মোস্তফা জামাল পপলু, খুলনা প্রেসক্লাব মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিল্টন, খুলনা সংবাদপত্র পরিষদের কোষাধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক আবু তৈয়ব, রকিব উদ্দিন পান্নু, এ এইচ এম শামীমুজ্জামান, নুরুল হাসান লিটু, গাজী মনিরুজ্জামান, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক উইনিয়নের কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রানা, বাপ্পী খান, নেয়ামুল হোসেন কচি, নুর হাসান জনি, আশরাফুল ইসলাম নুর, সুনীল দাস, উত্তম মন্ডল, হেলাল মোল্লা, প্রবীর বিশ^াস, অভিজিৎ পাল, আনিসুর রহমান কবীর প্রমুখ।
উল্লেখ্য গত রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে খুলনার খানজাহান আলী (রহ:)-রূপসা সেতুর ২ নম্বর পিলারের বেজমেন্ট থেকে খুলনার জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক বুলু দৈনিক বঙ্গবাণী পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ, চ্যানেল ওয়ান, ইউএনবি ও দৈনিক প্রবাহ পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। তিনি খুলনা প্রেসক্লাব ও খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে) ও বিএফইউজে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন।
এফপি/রাজ