সিলেটের বিশ্বনাথে চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র সুমেল আহমেদ শুকুর হত্যা মামলায় ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৭ জনের অর্থদণ্ডসহ যাবজ্জীবন এবং ১৭ জনের দুই বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক সৈয়দা আমিনা ফারহিন এই রায় ঘোষণা করেছেন। এসময় মামলায় মোট ৩২ জন আসামীর মধ্যে পলাতক মামুনুর রশিদ ছাড়া বাকিরা উপস্থিত ছিলেন।
রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে আদালতের এপিপি কামাল হোসেন দ্য ফিনান্সিয়াল পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একইভাবে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মামলার বাদি ইব্রাহিম আহমদ সিজিল দ্য ফিনান্সিয়াল পোস্টকে বলেন, “এখন সরকারসহ সংশিষ্ট সকলের কাছে দাবি রায়টি যেনো দ্রুত কার্যকর করা হয়।”
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবুল খায়ের হেলাল আহমদ দ্য ফিনান্সিয়াল পোস্টকে বলেন, “ন্যায় বিচার হয় নাই। ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হয়েছে। এধরনের ন্যায় বিচার যারা বিঘ্নিত করেছেন, তাদের অবিচারের কারণে রাষ্ট্র সমালোচিত হয়, বিচারব্যবস্থা সমালোচিত হয়। আমরা হাইকোর্টে আপিল করবো। এই সকল অবিচারের কারণে মানুষ টোটাল বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করে।”
ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত ৮ জন হলেন- সাইফুল আলম, নজরুল আলম, সদরুল ওরফে সাদর আলম, সিরাজ উদ্দিন, জামাল মিয়া, শাহিন উদ্দিন, মো. আব্দুল জলিল ও আনোয়ার হোসেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশপ্রাপ্ত ৭ জন হলেন- ইলিয়াছ আলী, আব্দুন নুর, জয়নাল আবেদিন, আশিক উদ্দিন, আসকির আলী, মো. আলাইদ মিয়া ওরফে ফরিদ মিয়া ও আকবর মিয়া। একইসঙ্গে এই ৭ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো দু'বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আর ২ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত ১৭ জন হলেন- লুৎফুর রহমান, ময়ূর মিয়া, মানুনুর রশিদ (পলাতক), কাওছার রশীদ, দিলাফর আলী, পারভেজ মিয়া, ওয়াহিদ মিয়া, দিলোয়ার হোসাইন, আজাদ মিয়া, মুক্তার আলী, আব্দুর রকিব, আঙ্গুর আলী, জাবেদুল ইসলাম ওরফে জাবেদ, শফিক উদ্দিন ওরফে রাজন, মো. মখলিছ মিয়া, ফিরোজ আলী ও ফখর উদ্দিন।
আদালতসংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালের ১ মে বিশ্বনাথের চৈতননগর গ্রামের নজির উদ্দিনের ক্ষেতের জমি থেকে জোর করে রাস্তায় মাটি তুলতে চান যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুল আলম। এসময় তাকে বাধা দেন নজির উদ্দিন, চাচাতো ভাই মানিক ও ভাতিজা ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্র সুমেল। এতে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সাইফুল আলমের বন্দুকের গুলিতে ওইদিন সুমেল নিহত হন। এসময় সুমেলের বাবা ও চাচাসহ ৪ জন গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর সুমেলের চাচা ইব্রাহিম আহমদ সিজিল বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিশ্বনাথ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তৎকালীন বিশ্বনাথ থানার ওসি তদন্ত রমা প্রসাদ চক্রবর্তী দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৩২ জনের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর এ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন।
মামলায় ৩৫ জনের মধ্যে মোট ২৪ জন স্বাক্ষী স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। গত ১৩ জুলাই মামলাটি যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ জুলাই রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছিল এবং ঐদিন আদালত ৩০ জন আসামিকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
মামলায় ৩২ জন আসামিদের মধ্যে এজাহার নামীয় আসামি মামুনুর রশীদ পলাতক এবং প্রধান আসামি সাইফুল আটকের পর থেকে প্রায় পৌনে ৪ বছর ধরে কারাগারে রয়েছে। পলাতক থাকায় মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
এফপি/রাজ