খুলনার বেসরকারি ক্লিনিক থেকে চুরি হওয়া চারদিনের নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় চুরি হওয়ার প্রায় ৭ ঘন্টা পর নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড় এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে দুপুরে নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড়ে অবস্থিত ড্যাপস্ হসপিটাল এণ্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দ্বিতীয় তলা থেকে ওই নবজাতটি চুরি করা হয়।
বার বার কন্যা সন্তান হওয়ায় শুশুড় বাড়ীকে খুশি রাখতেই চুরির ঘটনা ঘটান তৃতীয় তলায় কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া নারীর স্বজন। আজ সন্ধ্যায় ওই নারীকে আটক করার পর পুলিশকে এমনই তথ্য দেন ওই নারী।
ভুক্তভোগী শিশুটির স্বজন ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত শুক্রবার নগরীর ড্যাপস্ হসপিটালে বাগেরহাটের মোংলার সিগন্যাল রোডের বাসিন্দা সুজন মিয়া ও ফারজানা আক্তার দম্পত্তির ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওষুধ খেয়ে শিশুটির মা ঘুমিয়ে পড়েন। শিশুটি তার মায়ের নানীর কাছে ছিল। তিনি শিশুটি পাশে রেখে তন্দ্রাছন্ন হয়ে পড়েন। এ সুযোগে এক নারী শিশুটি নিয়ে পালিয়ে যান। আধাঘন্টা পর ঘুম থেকে উঠে তিনি শিশুটিকে না দেখতে পেয়ে চিৎকার ও খোঁজাখুজি শুরু করে। এ ঘটনায় ক্লিনিকে অন্যান্য রোগীদের মধ্যে আতংক দেখা দেয়।
এদিকে ওই দম্পত্তির দেওয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে খুলনা থানা পুলিশের একাধিক দল শিশুটিকে উদ্ধারে অভিযানে নামে। তারা আশাপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ট্রাফিক মোড় থেকে শিশুটি উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ক্লিনিকটিতে সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে অকেজো রয়েছে।
শিশুটির বাবা সুজন মিয়া তার নবজাতক পুত্রকে উদ্ধারে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাদের সকলের চেষ্টায় আমার সন্তানকে ফিরে পেয়েছি। এর থেকে আর আনন্দের কিছু নেই।
শিশুটির মা ফারজানা আক্তার বলেন, আমার বাচ্চাকে ফিরে পাওয়ায় আমি খুব খুশি। বাচ্চাটি সুস্থ আছে বলে তিনি জানান।
খুলনা মেট্রোপলিন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান বলেন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও পুলিশের একাধিক টিমের সম্মিলিক প্রচেষ্টা শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। পুলিশ এধরণের সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (দক্ষিণ) উপ কমিশনার সুদর্শন রায় জানান, একই ক্লিনিকের তৃতীয় তলায় আরেকজন নারীও একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এর আগে তার আরো চারটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পর পর পাঁচটি কন্যা সন্তান হওয়ায় তার স্বামী ও শুশুর বাড়ির লোকজন ক্লিনিকে তাদের দেখতে আসেনি। সে হতাশ হয়ে দ্বিতীয় তলায় জন্ম নেওয়া ছেলে সন্তানটিকে চুরি করে তার মায়ের কাছে দিয়ে আবার ক্লিনিকে ফিরে আসে। ওই নারীকে আটক করে জ্ঞিাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা ঘটনাটি দেখছি। দেখি কী করা যায়। তবে উদ্ধার হওয়া নবজাতক সুস্থ রয়েছে।
এফপি/রাজ