অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা এবং জোর আলোচনা শুরু হয়েছে।
ক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয়পক্ষই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অধ্যাপক ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সূত্র ও সরকারের উপদেষ্টা পর্যায়ের কয়েকজন জানিয়েছেন, তিনি ক্ষোভ ও হতাশা থেকে এমন সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছেন।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি তার পদত্যাগের ভাবনার কথা জানান। সভায় তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য, সড়কে লাগাতার আন্দোলন, সংস্কার-প্রক্রিয়ায় বাধা এবং রাষ্ট্রীয় কাজে বিভিন্ন মহলের অসহযোগিতা তাকে হতাশ করেছে।
এই খবর প্রকাশের পরপরই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নড়েচড়ে বসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ শুরু করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, আমরা ওনার পদত্যাগ চাই না। আমরা রোডম্যাপ চেয়েছি। ওনার উচিত দায়িত্বে থেকে নির্বাচনের পথনকশা দেওয়া।
রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রধান দলগুলো যেমন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও অন্যান্য দল অধ্যাপক ইউনূসকে দায়িত্বে রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়েছে। বিএনপিকে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সাক্ষাতের সময় দেওয়া হয়েছে।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বৃহস্পতিবারই অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে যমুনা বাসভবনে যান। সাক্ষাৎ না হলেও আজ সন্ধ্যায় তাদের বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। জামায়াত ও ইসলামপন্থী দলের নেতারা মনে করছেন, ইউনূস পদত্যাগ করলে দেশে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, এই মুহূর্তে পদত্যাগ নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে রোডম্যাপ ঘোষণা করাই হবে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে, এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূসের ওপর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। সেনাপ্রধানের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের আগ বাড়িয়ে কিছু বক্তব্য, এনবিআর বিলুপ্তি ইস্যু এবং বিএনপির দাবিতে যমুনা পর্যন্ত আন্দোলন তাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
তবে অধ্যাপক ইউনূসের ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, তিনি এখনো পদত্যাগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে তিনি রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেন কিনা, তা নিয়েও রয়েছে আগ্রহ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মনে করছে, নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা নিরসনে এখনই একটি পরিষ্কার ও সময়বদ্ধ রোডম্যাপ ঘোষণা জরুরি। এটি না হলে আন্দোলন-সংঘাত বাড়বে এবং অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বেও সংকট ঘনীভূত হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক পরিবর্তন ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব- এমন একটি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল দেশের জনগণের মধ্যে। এখন তার সরে যাওয়ার সম্ভাবনা সেই প্রত্যাশাকে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা এবং দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি- এই তিনটি বিষয় এখন দেশের রাজনীতির কেন্দ্রে। অধ্যাপক ইউনূস সিদ্ধান্ত নেবেন কি না, সেটাই এখন দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক প্রশ্ন।
এফপি/রাজ