লালমনিরহাট শহরের বিডিআর রোডস্থ পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে ৫৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন শহিদ পরিবারের সদস্য এস সুলতান আহমেদ ওরফে বাবলু (৭৮)।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে কেয়ার টেকার হিসেবে তিনি স্বপরিবারে ১৯ শতক জমিতে ৫৩ বছর ধরে থাকছেন।
সম্প্রতি একটি মহল উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দিয়েছেন। বিষয়টি তিনি ইতিমধ্যে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন।
আগামী ২৭ মে মঙ্গলবার লালমনিরহাটের যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে এস সুলতান আহমেদকে এ সংক্রান্তে হাজির হতে সমন দেওয়া হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার দুপুরে লালমনিরহাট শহরের বিডিআর রোডস্থ উক্ত পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে অবস্থিত বাস ভবন চত্বরে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন শহীদ পরিবারের সদস্য এস সুলতান আহমেদ ওরফে বাবলু।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এস সুলতান আহমেদের সহধর্মিণী। সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যে, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন উক্ত পরিত্যাক্ত সম্পত্তিতে আমার বসবাস সংক্রান্তে যে কোনো সময় তাদের প্রয়োজন হলে হস্তান্তর করতে বাধ্য থাকার জন্য ১৯৯৫ সালের ২৯ অক্টোবর আমার নিকট থেকে একটি লিখিত অঙ্গিকার পত্র নিয়েছেন। কিন্তু আমাকে কখনো উচ্ছেদ করে নাই।
কিন্তু পরিত্যক্ত সম্পত্তিটি জবরদখল করতে বিভিন্ন সময়ে কতিপয় কুচক্রী মহল ও ভূমিলোলুপ মহল উক্ত মূল্যবান সম্পত্তির দিকে নজর দেয়। জবরদখলে ব্যর্থ হয়ে ১৯৯৫ সালে লালমনিরহাটের আদালতে মামলা দায়ের করে।
উক্ত মামলায় সম্পত্তির ভূয়া মালিক ( ওয়ারিশ) সৃষ্টি করে জনৈক অবাঙালিকে একমাত্র ওয়ারিশ সূত্রে মালিক দাবি করে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে বিবাদি করে লালমনিরহাটের আদালতে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব)সহ তহশিলদার ও ভূমির দখলদার হিসেবে আমাকেসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের করে।
লালমনিরহাটের নিম্ন আদালতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বাদিনীর মামলাটি খারিজ হয়। এরপর মামলার বাদী অবাঙালি সুচতুর কৌশলে পুনরায় আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে না রাজি করে আবারও মামলাটি চালু করে বাদিনীর পক্ষে রায় নিতে সক্ষম হয়। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন।
কিন্তু হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে ফেরত পাঠান। এরপর বিষয়টি রিভিউ পিটিশন আকারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে সেখান থেকে আগের দেওয়া রায় বহাল রাখা হয়। এমতাবস্থায় মামলার বাদিনী অবাঙালি হামিদা খাতুন উক্ত সরকারি দখলে থাকা জমিটি নিজেদের দখলে নেওয়ার জন্য সকল প্রকার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
এ বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন উক্ত সরকারি মূল্যবান জমি রক্ষার জন্য ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের লিভ টু আপিল আদেশের বিরুদ্ধে পুনরায় রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যে, ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর লালমনিরহাটের গণমান্য ১২ জন ব্যক্তি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি লিখিত স্মারক লিপি প্রদান করেন। এতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চরম আত্মত্যাগকারী একটি শহীদ পরিবারকে বসতবাড়ি ছাড়া না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আকুল আবেদন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয় যে, এ সংক্রান্ত বিষয়ে ২০১৩ সালের বিভিন্ন সময়ে একাধিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শহীদ পরিবারের সদস্য এস সুলতান আহমেদ ওরফে বাবলু বলেন, লালমনিরহাট শহরে বসবাস করার মতো আমার কোনো জায়গা জমি নেই, এমতাবস্থায় আমাকে পরিবার সমেত উক্ত সরকারি জমি থেকে উচ্ছেদ করা হলে আর কোথাও যাওয়ার উপায় নেই, সড়কে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, উক্ত মূল্যবান সরকারি জমি বেদখল হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এবং শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে আমাকে পরিবার সমেত মাথা গোঁজার মতো একটা ঠিকানা দিতে প্রশাসনের প্রতি আকুল আবেদন জানান।
এফপি/রাজ