পিরোজপুরের কাউখালীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুম এবং গুপ্ত হত্যার’ শিকার ব্যবসায়ী নাজমুল হক মুরাদের সঠিক পরিচয় নির্ধারণ করতে কবর থেকে দ্বিতীয়বার লাশ উত্তোলন করে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে।
ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি এর কার্যালয় থেকে অনুরোধের প্রেক্ষিতে পিরোজপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান গত মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এ আদেশ দেন। মৃত্যুর ১৪ বছর পর দ্বিতীয় বার সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে পিরোজপুরের কাউখালীর পার সাতুরিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতি পদমর্যাদার সদস্য ও গুম কমিশনের সদস্য মানবাধিকার কর্মী নূর খান, কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বজল মোল্লা। কাউখালী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত দেবনাথ, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসতিয়াক আহমেদ, কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সোলায়মান, মামলার বাদী মুরাদের ভাই মিরাজুল ইসলামের উপস্থিতিতে মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করেন।
জানা গেছে, আইনজীবি গিয়াস উদ্দিন খান মাসুদ হত্যা মামলার আসামি কাউখালীর ব্যবসায়ী মুরাদ, রাজাপুর উপজেলার নৈকাঠী গ্রামের মিজান জোমাদ্দার ও ফোরকানকে ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার উত্তরা থেকে র্যাব পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। এরপরে তাদের কোন সন্ধান পায়নি তাদের পরিবার। ১০ দিন পরে ২৭ এপ্রিল ২০১১ ঢাকার তুরাগ তীরে বালির নিচ থেকে বস্তাবন্দি ৩ যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করে ছিল পুলিশ। পরে তিন জনের পরিবার তাদের লাশ সনাক্ত করে প্রত্যেক এর বাড়িতে দাফন করে।
কিন্ত দীর্ঘ ১৪ বছরে মুরাদের ছোট ভাই নাজমুল হক মুরাদের সঠিক সন্ধান এবং তদন্ত করে সুষ্ঠ বিচার দাবি করে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি নিকট । পরে গত ২৮ এপ্রিল (২০২৫ ) গুম সংক্রান্ত কমিশন এর দুই জন সদস্য কাউখালীতে আসেন এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে ঘটনার বিবরন শুনে মুরাদের লাশ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নির্দেশ দেন।
কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো: সোলায়মান বলেন, ১৪ বছর আগে গুম হওয়া ব্যবসায়ীর লাশ পরিবারের দাবিতে ডিএনএ টেস্টের জন্য দ্বিতীয়বার পুলিশ প্রহরার মধ্য দিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে। লাশ উত্তোলনে গুম কমিশনের কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার সহ আমরা সকলে উপস্থিত ছিলাম।
কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বজল মোল্লা বলেন গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি এর কার্যালয়ের অনুরোধের প্রেক্ষিতে পিরোজপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান স্যারের আদেশ মুরাদের লাশ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আজ (২৮ জুলাই) তোলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কাউখালীতে আইনজীবি গিয়াস উদ্দিন খান মাসুদ হত্যা মামলায় গুপ্ত হত্যায় নিহত দুইজন আসামি থাকায় মামলার বাদী নিহত দুই আসামির ডিএনএ টেষ্টের আবেদন করলে স্বরাষ্ট্র মস্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢাকার সিএমএম আদালতের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট একেএম এনামুল হক ২০১১ সালের জুন মাসে মুরাদ ও মিজানের ডিএনএ টেস্ট এর নির্দেশ দেয়।
২০১১ সালের ৪ জুলাই কাউখালীর পারসাতুরিয়া গ্রামে নাজমুল হক মুরাদের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে লাশের দাঁত সহ বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্টের জন্য পাঠানো হয়। পরে ডিএনএ টেস্টে কাউখালীতে দাফন দেয়া লাশ মুরাদের নয় বলে প্রমাণীত হয়েছে বলে জানিয়েছিল তৎকালিন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি আঃ রাজ্জাক। মামলায় মিজান ও মুরাদকে জীবিত দেখিয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল।
এফপি/রাজ