গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় এক বছর পূর্ণ হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত গতি ফেরেনি। মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা, কর্মসংস্থান সংকট, রফতানি হ্রাস এবং রাজস্ব ঘাটতির মতো চ্যালেঞ্জের মুখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
এপ্রিল ২০২৫-এ বাংলাদেশের পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.১৭%, যা মার্চে ছিল ৯.৩৫% । যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আশা প্রকাশ করেছেন যে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৫% এ নেমে আসবে , তবে বাস্তবতা হলো খাদ্য ও জ্বালানি খাতে উচ্চমূল্য সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে।
ব্যাংক খাতের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২.৬৩%, যা গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন । এই বিনিয়োগ স্থবিরতা সরাসরি কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলেছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৪-২৫ প্রান্তিকে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৬৩% ।
এপ্রিল ২০২৫-এ বাংলাদেশের রফতানি গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার প্রধান কারণ পোশাক খাতে উৎপাদন হ্রাস এবং জ্বালানি সংকট । এছাড়া, ভারত বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ৪২% আমদানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে, যার ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে ।
অর্থনীতির অন্যান্য খাতে মন্দা থাকলেও রেমিট্যান্স প্রবাহে উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। এপ্রিল ২০২৫-এ প্রবাসীরা ২.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫% বেশি ।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৪.২৫% বেশি । তবে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে । বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৩.৬% এ সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ।
নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সুরক্ষা জোরদার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, রাজস্ব আয় বাড়ানো, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং এলডিসি উত্তরণে প্রস্তুতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উচ্চাভিলাষী বাজেট বাস্তবায়নে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন কৌশল প্রয়োজন।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নতুন বাজেট এই সংকট মোকাবিলায় কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর। সরকার যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সফল হয়, তবে অর্থনীতির গতি ফেরানো সম্ভব হতে পারে।
এফপি/রাজ