Dhaka, Friday | 2 May 2025
         
English Edition
   
Epaper | Friday | 2 May 2025 | English
প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের বিমূর্ত প্রতীক সাংবাদিক ও টকশো ব্যক্তিত্ব এম এ আজিজ
মে দিবসে কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ‘শ্রম অধিকার’
নারী সংস্কারের বিরুদ্ধে এক মঞ্চে ডানপন্থি দল, সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি
বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় আলো ছড়াচ্ছেন ইউএনও ফেরদৌস আরা
শিরোনাম:

মে দিবসে কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ‘শ্রম অধিকার’

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫, ৩:৩৬ পিএম  (ভিজিটর : ২৭৬)

সমাজের অবহেলিত শ্রেণীকে নিয়ে ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় নজরুলের সুষ্পষ্ট উচ্চারণ: ‘আসিতেছে শুভদিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হবে ঋণ’—সাম্যবাদী চেতনা নিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লব সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করেন। একটি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে শ্রমিক শ্রেণী। তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম আর শরীরের ঘামের বিনিময়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। যদিও এ বিপুল জনশক্তির ইতিহাস শুভকর নয়। যুগে যুগে মালিকপক্ষের নানারূপ শোষণ-বঞ্চনার শিকার তারা। স্বল্প মজুরিতে কাজ করা এ শ্রমিকদের নেই যথাযথ সামাজিক নিরাপত্তা।

তাদের অধিকারের লড়াইয়ের এক করুণ ইতিহাসকে স্মরণ করে প্রতিবছর পহেলা মে‚ বিশ্বব্যাপি ‘মে দিবস’ তথা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় ৮০ টি দেশে ছুটির দিন হিসেবে বিবেচনা করে এ দিবসটি পালন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর ‘হে মার্কেটে’ ৮ ঘণ্টা শ্রমদিনের দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করলে ১৮৮৬ সালের ১ মে-তে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর গুলি চালানো হয়। এতে ১১ জন শ্রমিক নিহত হন। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে তাদের এ আত্মত্যাগকে স্মরণ করেই বিশ্বব্যাপি এ দিনটিতে পালিত হয় শ্রমিক দিবস।

সমাজের ‘জনসম্পদ’ হিসেবে নিয়োজিত সেইসব সামাজিক নিরাপত্তাবিহীন শ্রেণী তথা শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে রয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইন। রয়েছে বিভিন্ন ‘শ্রম সংস্থা’ কিংবা ‘শ্রমিক সংগঠন’। শ্রমিকদের যথাযথ অধিকার নিশ্চিতকরণের প্রেক্ষিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা ফুটে উঠেছে ‘দ্যা ফিনানশিয়াল পোস্টের’ প্রতিবেদনে। তাঁরা জানিয়েছেন শ্রমিকদের ‘সামাজিক নিরাপত্তা’ নিশ্চিতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা।

দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি বলে উল্লেখ করে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাকরিমুল ইসলাম বলেন‚ ‘শ্রমিক ও চাকরিজীবীদের মাঝে ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া আয় বৈষম্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম একটি বাধা। ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ ও অন্যান্য অধিকার আদায়ে এবং দক্ষ শ্রমিক গঠনে শ্রমিক আইন অন্যতম একটি হাতিয়ার। শ্রমিক আইন বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার সাথে গঠন এবং প্রয়োগ করলে তা অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়ন করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে নিয়ে যেতে পারে উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত বলেন‚ ‘দেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলগুলোরই কৃষক - শ্রমিক পর্যায়ের মানুষদের নিয়ে এক বা একাধিক সাংগঠনিক উইংস লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, আদৌ কি সেসবে উইংসের নেতৃত্বে শ্রমিকদের উপস্থিতি রয়েছে? নাকি স্রেফ শো-অফ করা! রাজনৈতিক শক্তিগুলো  প্রকৃতার্থেই শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে কি? রাষ্ট্রেের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো, সর্বস্তরে ইনসাফ কায়েম করা। অথচ শ্রমিকরা বরাবরই বেইনসাফ এর স্বীকার; তাদের সাথে ন্যায্যতার সাথে ডিল করা হয় না। শ্রমিকরা বঞ্চিত থেকে গেলে, বঞ্চিত থেকে যাবে দেশ ও রাষ্ট্র। এ. কে. ফজলুল হকের মতো শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের বড় অভাব আমরা অনুভব করি। পহেলা মে, ২০২৫ এর আকাঙ্ক্ষা এই যে, আমরা সবাই ফজলুল হক হয়ে উঠব, শ্রমিকদের অধিকার  নিশ্চিতে সার্বিক ভূমিকা পালন করব।’

১৮৮৬ সালে ‘হে মার্কেটের’ সেই আন্দোলন আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফুর রহমান বলেন‚ ‘শ্রমিক দিবস—এই দিন এত সহজে আমাদের কাছে আসেনি। এর জন্য সংগ্রামসহ সহ্য করতে হয়েছে নানান নিপীড়ন ও শোষণ। ১৯৩৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রদেশে শ্রমিকদের সংগঠন গঠনের মধ্য দিয়ে একটি সাংগঠনিক পরিকাঠামো তৈরি হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে শ্রমিকদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যার ধারা ১৪ ও ২০ সরাসরি শ্রমজীবী মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা তুলে ধরে। বাংলাদেশ শ্রম আইন‚ ২০০৬ অনুযায়ী দৈনিক সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিক সময়ে এসেও শ্রমিকদের অসুবিধার চিত্র দেখা যায়। যেমন: তারা ঠিকমতো বেতন পায় না‚ আবার জন্মদানকারী মায়েরা সুবিধা পায় না। যদিও আইনে এর সুনির্দিষ্ট প্রতিকার রয়েছে। আমরা আরো দেখতে পাই শিশুদের দ্বারা শ্রম সাধন। শ্রম আইন অনুযায়ী শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। এ দিনটিকে সার্থক করতে মে দিবসে এটাই কাম্য যে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার অপরাধ যেন আর না ঘটে আর শ্রমিকদের যেন সময়ের মধ্যে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া হয়।’

ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী শামসুল আরেফিন সাবিত বলেন‚ ‘শ্রমের মূল্য নির্ধারণে দরকার যৌক্তিক মানবিকতা। ছোটখাটো একজন ব্যবসায়ীর সাথে মানবিক মূল্য নির্ধারণ নিয়ে কথা বলাটা আধুনিক পুঁজিবাদী মানসিক দুনিয়ায় অনেকটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো। শ্রমিক শ্রেণীর শ্রমের মূল্য বলি হওয়ার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার দানবীয় উত্থান। ‘লেবার কষ্ট কাটিং’ এর প্রতিযোগিতায় আমরা নিজের অজান্তেই নিজেদের মানবিকতার কাটিং করে ফেলছি সেটার কোন অনুভূতি নেই। যেসমস্ত বিষয় বিবেচনায় শ্রমিকদের মূল্য নির্ধারণ হয় যেমন: মিনিমাম লিভিং কষ্ট, তা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে যে শ্রমিককে মানুষ নয় বরং যন্ত্র হিসেবে যতটুকু তেল কিংবা শক্তির প্রয়োজন তার বাইরে কিছুই দেয়া হয় না। তাহলে উত্তরণের উপায়? আসুন শ্রমিককে মেশিন কিংবা রোবট নয় বরং মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি।’

তিনি আরও বলেন‚ ‘১২ হাজার ৫ শত টাকা মূল্য নয় বরং তার থেকে কয়েকগুণ বেশি কিভাবে করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করি। যদি স্বাভাবিক ব্যাবসা পরিচালনায় তা প্রদান করা সম্ভব না হয় যে সিস্টেমে আমরা চলছি সেই সিস্টেমের পরিবর্তন সাধিত করে কিভাবে কাজটি করা যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা বা বৈঠক বসাই। দানবদের তৈরি করা নিয়ম থেকে বের হয়ে প্রফিট শেয়ারিং ব্যবস্থার চালুই হবে একমাত্র সমাধান।

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝