সারাদেশে চলছে বোরো ধান কাটা মৌসুম। হাওরে ধুম পড়েছে সোনালী ফসল কেটে ঘরে তোলার। এই ফসল সুন্দরভাবে ঘরে তুলতে পারলে তপ্ত রোদে ঝরা ঘাম আর বৃষ্টি ভেজার হাড়ভাঙ্গা খাটুনি এবছরের জন্য সার্থক হবে কৃষক, কৃষাণীদের। কিন্তু হাওড়ে মেশিন আর শ্রমিক সংকটে নিজের শ্রমে ঘামে ফলানো ধান কেটে ঘরে তোলা অনেকটাই দুঃসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে হাওড়ের কৃষকদের। হাওড়ে ধান কাটার মেশিন আর শ্রমিক সংকটে অধিকাংশ কৃষকই পড়েছেন বিপাকে।
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়নের কৃষক আকছির মিয়া (৫০)। নিজের প্রায় নয় একরসহ মোট সাড়ে বাইশ একর জমিতে আবাদ করেছিলেন হাইব্রিড জাতের বোরো ধান। প্রতি একরে গড়ে ধানের ফলন হয়েছে প্রায় ৬৫-৬৮ মণ। ইতিমধ্যে প্রায় ১১ একর জমির কেটেছেন তিনি। ধান কাটার মেশিনে কেটেছেন মাত্র দুই একর জমির ধান। প্রতি একরে মেশিনে ধান কাটায় খরছ পড়েছে ৭ হাজার ৭০০ টাকা। বাকি নয় একর জমির ধান কাটতে শ্রমিকদের দিতে হয়েছে প্রতি একরে ১৪ মণ করে ধান। যার বর্তমান স্থানীয় বাজার মুল্য ১১ হাজার ২০০ টাকা। গত কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় মেশিন না পেয়ে বাকি এগারো একর ধান কাটতে এখন প্রায়ই শ্রমিকদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন তিনি।
শুধু আকছির মিয়াই নন হাওড়ে ধানকাটার মেশিন আর শ্রমিক সংকটে ঘামে শ্রমে অর্জিত সোনালী ফসল ঘরে তুলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার অসংখ্য কৃষক।
তবে ধান কাটার মেশিন ও শ্রমিক সংকটের বিষয়টি ঠিক মানতে নারাজ উপজেলা উপজেলা কৃষি বিভাগ। তাদের দাবি ‘কিছু মেশিন তিন বছর পুরোনো হওয়ায় ঠিক মত কাজ করছে না আর কিছু মেরামত অযোগ্য। তবে উপজেলা ও উপজেলার বাইরের মেশিনসহ প্রায় ষাটটির বেশি মেশিন হাওরে ধান কাটছে প্রতিনিয়ত। আর যথেষ্ট শ্রমিকও রয়েছে হাওরে। ইতোমধ্যে উপজেলায় মোট ৬৬ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে।’
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১৪ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয় ৷ তবে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর। এই হিসেবে উপজেলায় বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার মেট্রিকটন। যার বর্তমান স্থানীয় বাজার মুল্য প্রায় ২ হাজার ১৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরে উপজেলার একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নে সরকারি ভুর্তুকি মুল্যে মোট ৭৬টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করা হয়।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে মেশিন আর শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে না পারা আর শ্রমিকদের অতিরিক্ত খরছে অনেক কৃষকের কপালেই এখন চিন্তার ভাঁজ।
পৌরসদরের কৃষক এরশাদ মিয়া জানান, ‘ঘাগানি বন্দে দশ একর জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো ধান আবাদ করেছিলাম। ধান পাঁকলেও মেশিন ও শ্রমিক না পাওয়ায় ধান কাটতে পারছি না। কয়েকদিন ধরেই শ্রমিক খুজতাছি।’
জলসুখা ইউনিয়নের কৃষক দ্বীন ইসলাম মিয়া জানান, ‘বদলপুর ইউনিয়নের গুঁজা ধরি হাওড়ে দশ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলাম। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে মেশিন পাচ্ছি না। শ্রমিকের দর বেশি তারপরও শ্রমিক খুজতেছি যাতে ধান গুলো কেটে ঘরে তুলতে পারি৷’
নুরুল আমিন নামে আরেক কৃষক জানান, ‘জলসুখা ইউনিয়নের কোদালিয়া হাওড়ে প্রায় বত্রিশ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছি। মেশিনে প্রায় পনের একর জমির ধান কাটতে পেরেছি। এক সপ্তাহ ধরে মেশিন নষ্ট তাই শ্রমিকদের কাছে ধর্না দিচ্ছি। প্রতি একর ১৪ হাজার করে দিবো বলছি তাদের কিন্তু তারপরও শ্রমিক মেলাতে পারছিনা। ধান গুলো জমিতে পরছে, কি করবো ভেবে পাচ্ছি না ‘
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ বলেন, উপজেলায় মোট ৬৬ শতাংশের বেশি জমি কর্তন শেষ হয়েছে। কিছু মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি আছে তবে মাঠে পর্যাপ্ত মেশিন রয়েছে। আর বৃষ্টির পানিতে মাটি নরম হওয়ায় অনেক জমিতে মেশিন যেতে পারছেনা। আমাদের তথ্য মতে দুইশোর বেশী শ্রমিক দল মাঠে ধান কাটার কাজ করছেন৷ আশা করছি আবহাওয়া ঠিক থাকলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই পুরো উপজেলায় ধান কাটা শেষ হবে।
এফপি/রাজ