ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস আরা’র কাঁধে ৪৫ পদের ভার। তবুও যেন হার না মানা এই নারী ইউএনও নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি সরকারের দেওয়া বাড়তি দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন তিনি। উপজেলার ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি মাদ্রাসা, ২টি কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাকে। এছাড়া উপজেলার বাজার কমিটির সভাপতি সহ বিবিধ কমিটির সভাপতি হিসাবে তাকে ১৬টি কমিটির সভাপতির দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি না থাকায় এরকম অন্তত ১০টি পদের দায়িত্ব সামলাতে গলদঘর্ম অবস্থা তার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাজের পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যান, দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভার মেয়র (পৌর প্রশাসক) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে এই ইউএনওকে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের স্থায়ী কমিটির ৯টিতে নারী ভাইস চেয়ারম্যান আর আটটিতে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। উপজেলা চেয়ারম্যান কয়েকটি কমিটিতে উপদেষ্টা এবং ৮-১০টি কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকতেন। তবে তারা না থাকায় উপজেলা প্রশাসক হিসাবে সব কমিটির দায়িত্ব এখন ইউএনওর কাঁধে। এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ নানা জনের লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ শোনা এবং সেগুলোর সমাধানও অনেক ক্ষেত্রে তাকেই করতে হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দুধ মিয়া বিএসসি জানান, তাদের কাছে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসতেন বিভিন্ন সেবা নিতে। এখন উপজেলা চেয়ারম্যান না থাকায় সব কাজের চাপ পড়েছে ইউএনও’র ওপর। একা এতো দায়িত্ব সামলানো সত্যিই খুব কঠিন।
ইউএনও ফেরদৌস আরা বলেন, এতগুলো দায়িত্ব একা পালন করা কষ্টকর হলেও তা করতে হবে। কাজ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। অতিরিক্ত সময় দিয়ে হলেও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। কাজের চাপ থাকলেও কেউ হয়রানির শিকার হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, অফিসের কর্মীদের নিয়ে অতিরিক্ত সময় কাজ করছি আমরা। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন উপজেলা পরিষদে এসে যেন ভোগান্তিতে না পড়েন, সেজন্য স্টাফসহ সবাই সেদিকেও নজর রাখছি।
ভূমিসেবা, পৌরসভার সেবা গ্রহীতাদের দাবি, “অবিলম্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাঞ্ছারামপুরে পদায়ন দরকার।জমির খারিজ, জন্মনিবন্ধন, খাজনা বা সংশোধন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ফলাফল পেতে আমাদের বিলম্ব হচ্ছে ।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম মুঠোফোনে জানান, “বাঞ্ছারামপুরের ইউএনও’কে একাধিক দায়িত্ব পালনে কষ্ট করছেন। বিষয়টি আমি অবগত। বাঞ্ছারামপুরের এসি ল্যান্ড কাম পৌর প্রশাসকের বিষয়টি সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি। ইনশাআল্লাহ, বাঞ্ছারামপুরবাসী এসি ল্যান্ড পেয়ে যাবে।”
এফপি/রাজ