ওসমানীনগরে হিসাবরক্ষণ অফিসে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষ ছাড়া অবসরকালীন পেনশনের টাকা ও বিদ্যালয় উন্নয়নের টাকা এবং টিএ বিল ছাড় দেন না কর্মকর্তা অনিমেষ পাল এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে চলমান এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলার ১১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রায় সাড়ে ৫শ শিক্ষক উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচীর ডাক দেয়। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও বিক্ষুব্ধ শিক্ষক নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। বৈঠকে নিজের ভুল স্বীকার করে আর এরকম কোন কাজ করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেন কর্মকর্তা অনিমেষ পাল। এরপর শিক্ষকরা তাদের মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে ফিরে আসেন।
জানা গেছে, গত রবিবার বিকাল ৪টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অনিমেষ পালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মানববন্ধন কর্মসূচীর ডাক দেন।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের এককালিন পেনশন উত্তোলন, বিদ্যালয়ের স্লিপ বিল, সহকারি শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড নির্ধারণ, উৎসব ভাতা ও বকেয়া বেতনসহ টাইম স্কেল নির্ধারণে বিভিন্ন অংকের টাকা না দিলে হয়রানি করেন। এর প্রতিবাদে মানবন্ধনের ডাক দেওয়া হয়।
প্রথমপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিব আহমদ চৌধুরী বলেন, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আমাদের শিক্ষকদের উচ্চ ধাপের বকেয়া বেতন উত্তোলনে নানা ধরণের হয়রানি করে থাকেন। এই হয়রানী থেকে মুক্তি পেতে আমি নিরুপায় হয়ে তাকে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। এই টাকা না দিলে নানান অজুহাত দেখিয়ে দিনের পর দিন তিনি শিক্ষকদের ফিরিয়ে দেন।
গোয়ালাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ওয়েছ আহমদ চৌধুরী বলেন, আমার বদলীজনিত কারণে এলপিসি প্রেরণে টাকা না দেওয়ায় এলপিসি পাঠাতে তিন মাস বিলম্ব করেন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। এতে আমি অনেক হয়রানির শিকার হয়েছি।
তিলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, একজন শিক্ষক অবসরে ৫৫/৬০ লক্ষ টাকা পান। তারা কাজ করে দিবে তাদেরতো ১২/১৫ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া উচিৎ। আমার কাছ থেকে এরকমই রেখেছেন। আমার কাজ করেছেন তাই আমি খুশি হয়ে দিয়েছি।
ফকিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার দাস বলেন, আমি শিক্ষক নেতা ছিলাম তাই সম্ভবত আমার কোন টাকা লাগেনি। আমি কাগজপত্র আমাদের শিক্ষা অফিসে দিয়ে কাজ করিয়েছি। ইদানীং শুনলাম হিসাবরক্ষণ অফিসে টিএ বিল তুলতে টাকা দিতে হয়।
ধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব বলেন, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে শিক্ষকদের বেতন বাদে সব ক্ষেত্রে টাকা দিতে হয়। আমরা এর প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়োজন করেছিলাম। ইউএনও স্যারের হস্তক্ষেপে এর থেকে সরে এসেছি।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ওসমানীনগর শাখার সভাপতি ও ফকিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের শিক্ষকগণ হিসাবরক্ষণ অফিসে গেলে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। আমরা হিসাবরক্ষণ অফিস ঘুষ ও দুর্নীতি মুক্ত চাই।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অনিমেষ পাল বলেন, একটি টিএ বিল প্রদান নিয়ে শিক্ষকদের সাথে ভুল বুঝাবুঝি হয়। শিক্ষকরা মানববন্ধন করতে গেলে পরে ইউএনও স্যার আমাদের নিয়ে বসলে বিষয়টির অবসান হয়। শিক্ষকদের অবসরে গেলে পেনশন তুলতে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় এটা আমার জানা নেই। ১৩তম গ্রেড নির্ধারণের সময় আমাদের কথা বলে অন্য কেউ যদি শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেয় এর দায় আমাদের নয়। স্লিপ ভাতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকরা গাফলা করে থাকেন, ইদানীং অনলাইনে আবেদনের সরকারি নির্দেশনা এসেছে। শিক্ষকরা অনলাইনে আবেদন করেননি তাই বিল পেতে সমস্যা হয়, এতে আমাদের কোন দায় নেই।
ওসমানীনগর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল হক সানি বলেন, আমি তো কোন ফাইল ডিলিং করি না,যারা ফাইল ডিলিং করে তারা বলতে পারবে।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের মাঝে একটি বিল অনলাইনে আবেদন করা নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হলে শিক্ষকরা মানববন্ধন করতে যান। বিষয়টির সমাধান হয়েছে, পরবর্তীতে তারা বিল পাবেন। পেনশনের টাকা উত্তোলসহ অন্যান্য দুর্নীতির বিষয়টি আমার জানা নেই।
এফপি/রাজ