Dhaka, Wednesday | 2 July 2025
         
English Edition
   
Epaper | Wednesday | 2 July 2025 | English
সক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে তেল পরিশোধনে ইস্টার্ন রিফাইনারির নতুন রেকর্ড
শাকিব খানের আগে ‘মেগাস্টার’ শব্দটা কানে লাগে: জাহিদ হাসান
সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমলো
মৃত্যুদণ্ড বাতিল হোলি আর্টিজান হামলার আসামিদের
শিরোনাম:

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে শয্যা সংকট, বাড়তি রোগীর চাপ

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩২ পিএম  (ভিজিটর : ৩৫)

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এখন বেশ নাজুক অবস্থা । একদিকে যেমন ডেঙ্গু রোগী বেশি অন্যদিকে ম্যালেরিয়া রোগ দেখা দেওয়ার কারণে কক্সবাজার সদর হাসপাতারে রোগীর বেশ চাপ দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যা থেকে ৫ শত শয্যায় করার কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। যার কারণে হাসপাতালে আসা অধিকাংশ রোগী সিট না পেয়ে নিচে বিছানা করে সেবা প্রদান করছে ডাক্তারগণ।

সোমবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ভেতরের দৃশ্য দেখা গেল শিশু ওয়ার্ডে এক বিছানায় ৩ থেকে চারজন শিশুকে। শিশু ওয়ার্ডে রাখার কথা ৪০ জনের কিন্তু সেখানে ভর্তি আছে প্রায় ২ শতাধিক শিশু।

অভিভাবকদের কাছ থেকে জানা গেল, হাসপাতালে প্রচুর পরিমান রোগীর কারণে শয্যা সংকট। যার কারণে তারা নিজেরাই কোন রকম ‘এডজাস্ট’ করে ডাক্তারের পাশে থেকে সেবা নিচ্ছে।

চার তলার পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে চিত্র ও একই অবস্থা। তারা ভেতরে কোন ধরনের শয্যা না পাওয়ার কারণে বাইরে বিছানা করে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছে। আর এভাবে প্রতিদিন জরুরি বিভাগ থেকেও ৫ থেকে ৭ শত রোগী সেবা গ্রহণ করে থাকে বলে জানা গেছে। 
কক্সবাজারে এখন দেশের সবচাইতে ঘনবসতি জায়গা উখিয়া। টেকনাফে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় রয়েছে প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ। এর উপর প্রতি সপ্তাহে পর্যটকের আনাগোনা সব মিলিয়ে দেশের সব চাইতে জনসংখ্যার চাপ রয়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। যার কারণে কক্সবাজারে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে ক্রমাগত। আক্রান্তের দিক থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হলেও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কোভিড১৯ বা করোনায় হানা দেয়ায় কক্সবাজার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যা বিভাগের কর্মকর্তা পংকজ পালের দেয়া তথ্য বলছে, কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গা সহ জানুয়ারি থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫০৮ জন। এর মধ্যে স্থানীয় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৩ জন। রোহিঙ্গা আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২০৫ জন।

মাসিক পরিসংখ্যান মতে, চলিত জুনের ২৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮৫৬ জন শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩০ জন স্থানীয় আর ৭২৬ জন রোহিঙ্গা। মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৪৭ জন, যেখানে ৭৭ জন স্থানীয় এবং ৭৭০ জন রোহিঙ্গা। এপ্রিল মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪২৩ জন, যেখানে ২৮ জন স্থানীয় এবং ৩৯৫ জন রোহিঙ্গা। এছাড়া মার্চ মাসে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৮৬ জন, জানুয়ারি মাসে ২১৯ জন আক্রান্ত হয়েছিল।
অপরদিকে এই ৬ মাসে কক্সবাজার জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩১ জন। যেখানে গত ২৫ দিনের আক্রান্তের সংখ্যা ২১৬ জন। এর আগে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে ২১৫ জন আক্রান্ত ছিলেন। গত ২৫ দিনের আক্রান্তের ২১৬ জনের মধ্যে স্থানীয় ১৪২ জন এবং রোহিঙ্গা ৭৬ জন। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে আক্রান্ত ২১৫ জনের মধ্যে ১০৮ জন স্থানীয় এবং ১০৭ জন রোহিঙ্গা রয়েছে।

ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে কেউ মারা না গেলেও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৫ মাসে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যা বিভাগের কর্মকর্তা পংকজ পাল।

তিনি জানান, ম্যালেরিয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় ১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জুনের ২৫ দিনে কেউ মারা গেছেন কিনা এটা মাসের শেষে জানা যাবে। এর আগে ম্যালেরিয়ায় ২০২৪ সালে ৫ জন এবং ২০২৩ সালে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়ার প্রকোপের মধ্যে নতুন করে করোনায় হানা দেয়ায় ভাবনার কারণ হয়েছে দাঁড়িয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগে।

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যা বিভাগের কর্মকর্তা পংকজ পাল জানিয়েছেন, বর্তমানে কক্সবাজারে ১৬ জন করোনায় আক্রান্ত রয়েছেন। যেখানে ৫ জন স্থানীয় এবং ১১ জন রোহিঙ্গা।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত সকলেই নিজ বাড়িতে রয়েছেন। এর মধ্যে প্রতিটি উপজেলায় আইসোলেশন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপের অন্যতম কারণ হিসেবে সচেতনার অভাব রয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন জানান, মুলত পরিচ্ছন্নতার অভাব, যেখানে সেখানে পানি জমে যাওয়া, অপরিচ্ছন্ন নর্দমার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। আর ম্যালেরিয়া কক্সবাজারে ছিল না। এটা বান্দরবনের পাহাড়ি এলাকা থেকে এসেছে। কক্সবাজার জেলার মানুষের সাথে বান্দরবনের আশা-যাওয়া বেশি। এটার জন্যও খুবই সচেতন হওয়া জরুরি।

এর মধ্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে কীটনাশকযুক্ত মশারি, প্রচারণা সহ নানা কার্যক্রম চলছে।

 রোগীদের চাপে ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। নির্ধারিত আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন সোমবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের আসন ছাড়িয়ে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।

এদিকে কক্সবাজারে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গত জুলাই মাসে ২৫০ শয্যার সরকারি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৩১৩ জন ডেঙ্গু রোগী। আর গত আগস্ট মাসে ভর্তি ছিলেন ৯৯৯ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে তিন গুণের বেশি। গত তিন মাসের পরিসংখ্যান হিসাব করলে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৩২ গুণের বেশি।
চিকিৎসকেরা জানান, গত আগস্ট মাসজুড়ে ভারী বর্ষণের কারণে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া ডেঙ্গু মৌসুমও শুরু হয়েছে। এ কারণে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গত কয়েকদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬৪ জনের বেশি।

এদিকে ২৫০শয্যা কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের অসুস্থতা পর্যালোচনা করে গ্রিন, ইয়োলো ও রেড জোনে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এক্সরে ও ইসিজি মেশিনসহ রোগ নিরূপনের সার্বক্ষণিক ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। জরুরি ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সবধরনের উপকরণ বিনামূল্যে দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা- আইসিআরসি এর সহায়তায় ২০১৯ সাল থেকে চলছে এই সেবা কার্যক্রম। তারপরেও রোগি বেশি হওয়ার কারণে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রোগিদের।

শনিবার  প্রচন্ড জ্বর নিয়ে রামু এলাকা থেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নুর মুহাম্মদ (১৫)। ওয়ার্ডগুলোতে ভর্তি রোগী আসনগুলো পরিপূর্ণ করায় নুরের ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়। শুধুমাত্র নুর নয়, তার মতো বারান্দায় ঠাঁই হয়েছে দুল্লার বাহাঙ্গার জুবেদা, কুমারগাতার লিপি আক্তার (৪৭)  পেট ব্যথা নিয়ে বাঁশাটির হ্যাপী (২৫), নাজমাসহ (১৯) অনেকেরই। হাসপাতালে রোগীতে ঠাসা থাকার কারণে ডাক্তারগণ সঠিক সময়ে তাদের খাবার খাওয়ারও সময় মিলে না । 

এদিকে কক্সবাজার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলকা হওয়ার কারণে ও মেডকেল কলে থাকায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালকে ২৫০ থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি তৎকালিন সময়ে বলেন, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অবস্থানের কারণে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। যে কারণে জনবল বাড়ানো, ২৫০ থেকে হাসপাতালটিকে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণ, কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপনসহ হাসপাতালের নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। আবার অনেকেই হাসপাতালে সেবা পেতে একটু দেরি হলেই  অনেকে ক্ষোভে হাসপাতাল ছেড়ে ক্লিনিকের ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছেন । 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন নার্স বলেন, প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। রোগীদের সেবা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন ৫শতাধিক রোগীকে কেবল বহির্বিভাগে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাদের চিকিৎসা দিতে যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন তা আমাদের নাই।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সুপার মংটিংনিউ  জানান, গত দুই মাস ধরে হাসপাতালে সাধারণ রোগী ও ভর্তি রোগীদের অনেক চাপ রয়েছে। আমাদের আসন ২৫০ হলেও প্রায় ৪শত থেকে ৫  রোগি ভর্তি থাকে এবং আমাদের সেবা দিতে হয়। এবং জরুরি বিভাগের প্রতিদিন প্রায় ৩শ থেকে  ৪শত রোগি সেবা পেয়ে থাকেন। আমরা  বাধ্য হয়েই সিট না থাকায় হাসপাতালের রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। 

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝