চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা চকরিয়ার চিরিঙ্গা মাতামুহুরী সেতু। ছয় লেন বিশিষ্ট এই আধুনিক সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭৪ কোটি টাকা। অথচ উদ্বোধনের চার বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটিতে এখনো স্থায়ী লাইটিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়নি। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দা, নিয়মিত যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর সেতুর পুরো অংশ এবং দুই পাশের এপ্রোচ সড়ক অন্ধকারে ডুবে যায়। কেবলমাত্র দূরবর্তী যানবাহনের হেডলাইটের আলোই ভরসা। বিশেষ করে মধ্যরাতের দিকে সেতুটি কার্যত পরিণত হয় একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও নির্জন এলাকায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত চার বছরে এই সেতু ও আশপাশের এলাকায় একাধিক ছিনতাই, সন্দেহজনক চলাচল ও অপরাধমূলক ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে ও নিয়মিত টহল না থাকায় এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হলে আরও উঠে আসে, অন্ধকারের কারণে ভারী যানবাহন চালকরা সেতুর লেন বিভাজন ও সামনে থাকা যানবাহনের গতিবিধি সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না। এতে হঠাৎ ব্রেক, নিয়ন্ত্রণ হারানো ও সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ছে। স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা জানান, কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি ছয় লেন বিশিষ্ট জাতীয় মহাসড়ক সেতুতে স্থায়ী লাইটিং ব্যবস্থা না থাকা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। স্থানীয় সচেতনমহল প্রশ্ন তুলে বলেন, সেতুর মূল নকশায় কি লাইটিং ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল? থাকলে কেন তা বাস্তবায়ন হয়নি? আর না থাকলে এত বড় প্রকল্প অনুমোদনের সময় বিষয়টি কেন উপেক্ষিত হলো?
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এমন অবহেলা দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতারই প্রমাণ। তাদের প্রশ্ন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু যদি নিরাপত্তাহীন হয়, তবে উন্নয়নের সুফল কোথায়?
এদিকে, জাতীয় দৈনিক ভোরের ডাকের চকরিয়া উপজেলা সংবাদদাতা সাঈদী আকবর ফয়সাল এ বিষয়ে সওজ, কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি দ্রুত সেতু ও উভয় পাশের এপ্রোচ সড়কে স্থায়ী ও পর্যাপ্ত লাইটিং ব্যবস্থা স্থাপনের দাবি জানান।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, শুধু আবেদন নয়- এই বিষয়টি এখন জরুরি জননিরাপত্তার প্রশ্ন। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা অপরাধ ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
উল্লেখ্য: চিরিঙ্গা মাতামুহুরী সেতু শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষের চলাচলের জীবনরেখা। অথচ অন্ধকারে ডুবে থাকা এই সেতু আজ নিজেই হয়ে উঠেছে ঝুঁকির নাম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগই পারে এই আতঙ্কের অবসান ঘটাতে।
এফপি/জেএস