পাবনায় শীতের তাপমাত্রা হঠাৎই নেমে যাওয়ায় শহরজুড়ে এখন শীতবস্ত্র কেনাবেচার উৎসব। ভোরে ঘন কুয়াশা, দুপুরে হালকা রোদ এবং রাতে তীব্র ঠান্ডা ও শীতল বাতাসের কারণে মানুষের শীতবস্ত্রের চাহিদা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। এই সুযোগে পাবনা পৌর হকার্স মার্কেটসহ শহরের প্রধান সড়কের দুই ধারের ফুটপাত এখন শীতের পোশাকের জমজমাট বাজারে পরিণত হয়েছে।
বিশেষ করে আব্দুল হামিদ সড়কে ফুটপাতজুড়ে রঙিন শীতের পোশাক সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। সকাল থেকেই জমে ওঠে মানুষের ভিড়—শিশুদের উষ্ণ পোশাক থেকে শুরু করে সোয়েটার, জ্যাকেট, কোর্ট, ব্লেজার, কম্বল, কম্ফর্টার, হাত–মোজা, পা–মোজা—সবই পাওয়া যায়। গার্মেন্টসের নতুন ও রিজেক্ট কাপড়, বিদেশি এক্সপোর্ট কোয়ালিটির পোশাক ও ব্যবহৃত ওয়াশ কাপড় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে কম দামের কারণে। যা চলে অনেক রাত অবধি।
শীতের তাপমাত্রায় ভিড় আরও বেড়েছে। গত কয়েকদিনে পাবনায় রাতের তাপমাত্রা ১৬–২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। ভোর থেকে কুয়াশায় ঢেকে যায় শহর। শীতের তীব্রতা বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত সবাই ছুটছেন ফুটপাতের বাজারে কম দামে শীতের কাপড় কিনতে।
সাধারণ ক্রেতারা জানান, “মার্কেটে এক জিনিসের দাম যেটা ১২০০ টাকা, ফুটপাতে সেটার মতোই জিনিস ২০০–৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। শীতে বাঁচার জন্য এখানেই ভরসা।”
একজন বেসরকারি চাকরিজীবী ক্রেতা ফারুক আহমেদ বলেনঃ “আমি ছোটখাটো একটা চাকরি করি, বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান সহ ৭ জনের পরিবার। ছোটবেলায় মার্কেটের দামি পোশাক বাবা আমাদের পরালেও এখন ফুটপাত থেকেই পরিবারের সকল কাপড় কেনা চেষ্টা করি, বিশেষ করে শীতের কাপড় আমাদের একমাত্র ভরসা এই হকার্স মার্কেট”।
প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা চন্দনা রাণী বলেনঃ “আমি আমার স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া মেয়ের জন্য এখান থেকেই কেনাকাটা করি। তবে ৭/১০ দিন ঘুরে যাচাই করে কিনি, যেটা পাই সেটা গায়ে দিলে আর কেউ বোঝেনা কোথা থেকে কতদামে কেনা এই পোশাক”।
ছোট্ট কাঠের টেবিল, কাগজের বড় কার্টুন আর দেয়ালে হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রাখা এবং রাস্তায় প্লাস্টিক পেপারের উপর বিছানো কাপড়ের গাট্টিতে রঙিন সোয়েটার–জ্যাকেট ঘেঁটে নিজেদের জন্য উপযোগী পোশাক বেছে নিচ্ছেন নারী–পুরুষ এবং কিশোররা। কেউ দামাদামি করছেন, কেউ আবার শিশুদের শীতের পোশাক মিলিয়ে দেখছেন। ফুটপাতে সাজানো এসব দোকানের সামনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থাকে টানা ভিড়।
পোশাক বিক্রেতা শফিক, আব্দুল্লাহ, জয়নাল বলেন, “শীতকালই আমাদের সবচেয়ে বড় মৌসুম। মানুষ কম দামে ভালো জিনিস পায়—আমরাও ঠিকমতো রোজগার করতে পারি। এই কয়েক মাসই আমাদের ভরসা।” বাজার সংশ্লিষ্ট এলাকার কিশোর যুবকরাও ফুটপাতে মৌসুমী ব্যবসা করে ক্ষণিকের জন্য বেকারত্ব ঘোচাতে পেরে খুশি।
ফুটপাতের বাজারে মিলছে প্রয়োজনীয় সবকিছু। শীতের পোশাক ছাড়াও এই বাজারে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে— শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের পোশাক, জুতা–স্যান্ডেলসহ বিভিন্ন ব্যবহৃত গৃহস্থালী সামগ্রী। শহরবাসীর কাছে তাই এটি এখন এক প্রকার “সাশ্রয়ী শীতবাজার”। শীত যত বাড়ছে, বাজার তত জমে উঠছে বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিক ও ভ্রাম্যমাণ ফুটপাতের কাপড়ের দোকানগুলো।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাঝ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত শীত আরও বাড়বে। আর তাপমাত্রা কমলেই ফুটপাতের এই বাজারে ভিড় হবে আরও বেশি।
শীতের কাপড় কেনায় মানুষের এমন আগ্রহ দেখে হকাররাও আশাবাদী—এই মৌসুম তাদের জন্য ভালো আয় বয়ে আনবে।
এফপি/জেএস