ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে চলছে মাসব্যাপী শিল্পপণ্য ও বাণিজ্য মেলা। পহেলা নভেম্বর উপজেলার ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন মাঠে নেক্সুরা ট্রেডিং কর্পোরেশনের আয়োজনে শুরু হওয়া এই মেলা স্থানীয়দের পাশাপাশি আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই মেলায় ভিড় করছেন হাজারো মানুষ। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে সন্ধ্যার পর পুরো মাঠ উপচে পড়া ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, মেলা প্রাঙ্গণের প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়নে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। বাঞ্ছারামপুরের পাশাপাশি মেলায় হোমনা, তিতাস, মেঘনা, আড়াইহাজার, নবীনগর, মুরাদনগর ও মাধবদী—এলাকার মানুষজনও দলে দলে ভিড় করছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনই লাখ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে এখানে।
আয়োজকদের সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যবসায়ীদের প্রায় ৭০টি স্টল ও চারটি প্যাভিলিয়ন রয়েছে মেলায়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ইলেকট্রনিক্স, গৃহস্থালী সামগ্রী, পোশাক, ফার্নিচার, খেলনা, প্রসাধনী ও হস্তশিল্পের সমাহারে রঙিন হয়ে উঠেছে পুরো মেলা। আয়োজক কমিটির পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন বকুল জানান, মেলা চলবে চলতি নভেম্বর মাসজুড়ে।
শিশুদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, ড্রাগন ট্রেন, মিনি রাইড ও বিভিন্ন গেম জোন। পাশাপাশি ফুচকা, চটপটি, বার্গার, তান্দুরি চা ও নানা স্বাদের খাবারের স্টল দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করছে।
আয়োজক কমিটির প্রধান আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পণ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং ব্যবসায়ীদের বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি করতেই এই মেলার আয়োজন। এখানে কোনো জুয়া বা লটারি নেই—পুরো পরিবেশই পারিবারিক।’
মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রচণ্ড ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্টল–প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীরা। শীত উপেক্ষা করে সকালের মিষ্টি রোদ থেকে রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকছে। শীতের পোশাক, গৃহস্থালী সামগ্রী, নারীদের সৌন্দর্য পণ্য, শিশুদের খেলনা ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের স্টলগুলোতে ভিড় ছিল উল্লেখযোগ্য।
ব্লেজারের একটি স্টলে দেখা যায়, ক্রেতাদের ঢল সামলাতে ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্টলের বিক্রয়কর্মী মো. সাহাদাত বলেন, ‘ভিড় হবে জানতাম। কিন্তু আজকের ভিড় প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। সকাল ১১টার পর থেকে কাজের ফাঁকে নিশ্বাস নেওয়ারও সময় পাচ্ছি না।’
কুমিল্লার হোমনা থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় আসা মামুন বলেন, ‘শুরুর দিন থেকেই বাচ্চারা মেলায় আসার বায়না ধরেছিল। আজ শুধু ঘুরে দেখাব। মেলার শেষ দিকে কেনাকাটা করব।’
নবীনগর থেকে আগত শিক্ষিকা সালমা বেগম জানান, শিশুদের খেলনা, পোশাক থেকে শুরু করে বাড়ির রাইস কুকার–সবই মিলেছে মেলায়। ‘বাচ্চারা খুব মজা পেয়েছে, আমরাও ভালো সময় কাটাচ্ছি,’ বলেন তিনি।
বাঞ্ছারামপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র আসিফ সাতজন বন্ধুকে নিয়ে এসেছেন মেলায়। তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা মিলে ঘুরতে এসেছি। এখানে সময় কাটাতে ভালো লাগছে। টুকটাক কেনাকাটা করব।’
বিক্রেতারাও মেলার ভিড়ে সন্তুষ্ট। গৃহস্থালী পণ্যের বিক্রেতা আবদুর রহমান বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার ভিড় থাকে, বিক্রিও বাড়ে। আজও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভিড় বেড়েছেই।’
খেলনা ও নারীদের পণ্য বিক্রেতা জহির আহমেদ বলেন, ‘এই ভিড়ই মেলার প্রাণ। সামনে আরো ক্রেতা বাড়লে ব্যবসা আরো জমবে।’
দর্শনার্থীরা বলছেন, বাণিজ্য মেলা স্থানীয় ব্যবসা ও অর্থনীতিকে চাঙা করবে। উদ্যোক্তাদের আশা—এই আয়োজন মানুষের কেনাকাটা ও বিনোদনের মাধ্যম হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
এফপি/অ