পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর—এই তিন নদ–নদীর মিলন মোহনায় যাত্রা পথে ট্রলারে বসে একদল শিশু রংতুলি হাতে ফুটিয়ে তুলছে তাদের কল্পনার জগৎ। কারও তুলির টানে উদীত হচ্ছে নদীর জল, কেউ আঁকছে নদীর উথলে পড়া ঢেউ। আবার কেউ অঙ্কনের মাধ্যমে তুলে ধরেছে ম্যানগ্রোভ টেংরাগিরি বন, ট্রলারভ্রমণের সকাল, ঝাউগাছের ফাঁকে রবি'র আলো। প্রকৃতি যেন হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল এই ছোট্ট শিশু শিল্পীদের ক্যানভাসে।
আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে এই দৃশ্যের দেখা মেলে বরগুনার তালতলী উপজেলার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর—এই তিন নদ–নদীর মিলন মোহনায়।
সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার। সকাল নয়টা। বরগুনার তালতলী উপজেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খালে দাঁড়িয়ে ছিল স্টিলের তৈরি একটি ট্রলার। সেটিই ছিল দিনের বিশেষ ভ্রমণের বাহন। শিশুদের রংতুলির জন্য সাজানো ট্রলার যেন ভাসমান কর্মশালার মাঠ। শিশু চিত্রশিল্পীদের নিয়ে ট্রলারটি ছাড়ল পায়রা নদীর শেষপ্রান্তের দিকে যেখানে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর—এই তিন নদ–নদী গিয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরের মোহনায়। যাত্রাপথে দু'ধারের টেংরাগিরির সবুজ প্রকৃতি আর নদীর উষ্ণ হাওয়া কাগজের পাতায় অন্য রকম প্রাণ এনে দিল।
শিশুদের হাত ধরে আঁকার পাঠ দিচ্ছিলেন বরিশালের নন্দন আর্ট স্কুলের পরিচালক চন্দ্রশেখর রায়। কীভাবে রং তোলা হবে, কোথায় ছায়া পড়ে, আর কীভাবে জলের রং বদলে যায়। তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন ধীরে ধীরে পরম মমতায়। পাশে ছিলেন তালতলী চারুকলা একাডেমির পরিচালক রফিকুল ইসলাম অন্তর। নৌ ভ্রমণ আর ছবি আঁকার পুরো আয়োজনে তিনি তদারকির দায়িত্বে ছিলেন।
পরিবেশ বিষয়ক এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার নাম ছিল ‘নদী পথে ছবি আঁকি’। আয়োজন করেছিল ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও প্লানেটিয়ার্স ক্লাব। সহযোগিতায় ছিল পরিবেশবান্ধব সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)। ধরা'র তালতলী-আমতলী'র সমন্বয়ক আরিফুর রহমান বলেন, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় ৫৫ জন শিশু এবং তাদের অভিভাবকরা অংশ নেন। দূপুরের খাবার শেষে এক সুন্দর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয় নিদ্রা সৈকতে এবং বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
দিন শেষে ট্রলার যখন ফিরে এল ঘাটে, তখন শিশুদের আঁকা ছবি যেন নদীপথের সেই সকালকে এক একটি ফ্রেমে বেঁধে রাখল। প্রকৃতি ও রংতুলির এই মিলবন্ধন শিশুদের জন্য যেমন আনন্দের ছিল, তেমনি পরিবেশ চেতনাতেও যুক্ত হলো নতুন এক অভিজ্ঞতা, এমনটাই বলছিলেন অংশগ্রহণকারী শিশুদের অভিভাবকরা। যারা সকাল থেকেই শিশুদের পাশে থেকে রংতুলিতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
এফপি/জেএস