কারিতাস বাংলাদেশ ‘সুন্দরবন অঞ্চলের শিশুদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও ঝুঁকি’ শীর্ষক একটি কর্মশালার আয়োজন করে। এ প্রকল্পটি Climate-Induced Migration and Modern Slavery (CIMMS) নামে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালী ইউনিয়নে বাস্তাবায়িত হয়ে আসছে।
আজ (২৯ অক্টোবর) কারিতাস বাংলাদেশ, খুলনা অঞ্চল, রূপসা স্ট্র্যান্ড রোডের মাইকেল এ. ডি. রোজারিও হল রুমে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় মোট ৪৬ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি, এনজিও, একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক, এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কারিতাস খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক জনাব আলবিনো নাথ।
অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— মো. সাদিকুল ইসলাম, পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, খুলনা, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ড. সাইফুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এছাড়াও রূপান্তর সংস্থা, সাংবাদিক, এবং শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, রমজাননগর ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন।
কর্মশালায় গবেষণার মূল তথ্য উপস্থাপন করেন কারিতাসের গবেষণা সমন্বয়কারী মো. মঈন উদ্দিন (সিডিআই), ব্যবস্থাপক সুভাস গোমেজ (ইসিএফএস) কারিতাস কেন্দ্রীয় কার্যালয়, কারিতাস কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তাজীন হোসেন (টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ইসিএফএস) এবং কারিতাস খুলনা অঞ্চলের প্রোগ্রাম অফিসার (ডিএম) ড. সুমন কুমার মালাকার।
মূল উপস্থাপনায় তুলে ধরা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের শিশুদের জীবনে কীভাবে গভীর প্রভাব পড়ছে—বিশেষ করে বিদ্যালয় ত্যাগ, শিশু শ্রম, অনিরাপদ অভিবাসন ও ঋণ বন্ধকীকরণের মতো ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণায় আরও প্রকাশ পেয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম আবহাওয়া, জীবিকা হারানো ও অবকাঠামো ক্ষতির কারণে নারী ও কিশোরীদের ঝুঁকিও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
কারিতাস খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক জনাব আলবিনো নাথ উদ্বোধনী বক্তব্যে কর্মশালার উদ্দেশ্য তুলে ধরেন এবং বলেন, কারিতাস বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রমাণভিত্তিক গবেষণা ও সরকারি—বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করছে।
বিশেষ অতিথি মো. সাদিকুল ইসলাম, পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগ, তার বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুদের জীবন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে শিশু সুরক্ষা জোরদার করা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সমাজসেবা বিভাগ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো জরুরি। তিনি শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান জানান।
অনন্য অতিথিগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত শিশু শ্রম ও শোষণ রোধে বহুমাত্রিক উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি জলবায়ু সহনশীল জীবিকা গড়ে তোলা, সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালার শেষে অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা কারিতাস বাংলাদেশের এ প্রমাণভিত্তিক গবেষণা উদ্যোগকে প্রশংসা করেন এবং সুন্দরবনের শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়তে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
কারিতাস বাংলাদেশ সকল সরকারি দপ্তর, উন্নয়ন সহযোগী ও অংশীদারদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও শিশু—নিরাপদ সমাজ গঠনে প্রতিশ্রুতির জন্য।
এফপি/এমআই