শিরোনাম: |
শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি যেন সবুজে লেখা এক কবিতা। টিলা, চা বাগান, পাখির কিচিরমিচির আর নীরব বিকেল-সব মিলে এই অঞ্চলের প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে অপূর্ব সৌন্দর্যের গল্প। সেই গল্পেরই এক মনোমুগ্ধকর অধ্যায় ভাড়াউড়া লেক। শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত এই লেকটি যেন প্রকৃতির কোলে শুয়ে থাকা এক শান্ত স্বপ্ন।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে ভাড়াউড়া লেকের অবস্থান। শহর ছাড়িয়ে যখন দুই কিলোমিটার পথ পেরিয়ে চা বাগানের শুরু, তখন থেকেই চোখে পড়ে এক অনন্ত সবুজের সমুদ্র। সরু কাঁচা পথ ধরে যেতে যেতে একসময় চোখে পড়ে লেকের আভাস-শান্ত জলে প্রতিফলিত হয় সবুজ টিলা আর আকাশের মায়া।
ভাড়াউড়া চা বাগান শ্রীমঙ্গলের অন্যতম প্রাচীন চা বাগান। যদিও এর প্রতিষ্ঠাকাল সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না, তবে ভাড়াউড়া চা কারখানা ১৮৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। সেই থেকেই এ বাগান শ্রীমঙ্গলের চা শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে টিকে আছে। চা গাছের সারি সারি সবুজ ঢেউয়ের ফাঁকে ঘেরা এই লেকটি মূলত চা বাগানের সেচ কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি এখানে মাছ চাষও করা হয়।
কিন্তু শুধুই সেচ বা মাছ চাষ নয়, এই লেক এখন শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি প্রেমী ও পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্যস্থল। চারপাশে উঁচু টিলা, তাতে সবুজ চা গাছের ছড়াছড়ি-লেকের পানিতে সেই টিলার প্রতিবিম্ব যেন এক জীবন্ত ছবি। শীতে এই লেক হয়ে ওঠে অতিথি পাখিদের স্বর্গরাজ্য। দূরদেশ থেকে উড়ে আসা পাখিরা এখানে কিচিরমিচির করে, জলে ডুব দেয়, আবার উড়ে যায় আকাশে-তাদের সেই উড়াউড়ি আর সুরেলা ডাক চারপাশে এক মায়াবী আবহ তৈরি করে।
ভাড়াউড়া লেক ঘিরে ফোটে নানা রঙের ফুল, বর্ষায় টিলার ঢাল বেয়ে নেমে আসে ঝিরিঝিরি জলধারা, শাপলা-পদ্মের সৌন্দর্য। ঋতুভেদে লেকের রূপ বদলায়, কিন্তু এর শান্তি আর নৈসর্গিক সৌন্দর্য একই থাকে। লেকের আশপাশে কয়েকটি নিরিবিলি জায়গা আছে, যেখানে বসে বিকেলের মিষ্টি হাওয়া উপভোগ করা যায়।
যারা একটুখানি নির্জনতা খোঁজেন, প্রকৃতির সান্নিধ্যে হারিয়ে যেতে চান-ভাড়াউড়া লেক তাদের জন্য আদর্শ স্থান। পর্যটকরা এখানে এসে ছবি তোলেন, সেলফি নেন, কেউবা চুপচাপ বসে থাকেন প্রকৃতির সুরে। বিকেলবেলা সূর্য যখন পশ্চিমে ঢলে পড়ে, তখন লেকের জলে তৈরি হয় আলোর মায়া-সে দৃশ্য হৃদয়ে এক অমলিন স্মৃতি হয়ে থাকে।
ভাড়াউড়া লেক অবস্থিত চা বাগানের অভ্যন্তরে। তাই সেখানে প্রবেশ করতে হলে বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন। স্থানীয় গাইড বা অনুমোদিত দর্শনার্থী হিসেবে গেলে কোনো সমস্যা হয় না। পথটি কিছুটা কাঁচা হলেও, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে রিকশা, মোটরবাইক বা সিএনজি অটোতে সহজেই যাওয়া যায়।
স্থানীয় চা শ্রমিকদের সরল জীবনযাপন, চা পাতার গন্ধ আর সবুজ প্রকৃতি মিলিয়ে ভাড়াউড়া লেক এক জীবন্ত গ্রামীণ চিত্রপট। এখানে দাঁড়িয়ে মনে হয়, সময় যেন কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেছে।
শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের নিস্তব্ধতা, টিলার সবুজ ঘেরা পরিবেশ আর অতিথি পাখির কলকাকলিতে ভাড়াউড়া লেক এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয় প্রতিটি ভ্রমণপ্রেমীকে।
এফপি/অআ