সাগরের তলদেশে রয়েছে রহস্যেঘেরা নানা প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য। সবারই জানার ইচ্ছে সাগরের তলদেশে কি রয়েছে। সাগরের তলদেশের রহস্য উদঘাটনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হাতে নিয়ে গড়ে তুলেছে কক্সবাজারের রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়াম।
বর্ষার শেষে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যটকদের আসা-যাওয়ায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। এরই মাঝে পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে কক্সবাজারের অন্যতম প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন জাতের সমুদ্রের তলদেশের রহস্যঘেরা রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়াম। এটি কক্সবাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন রেডিয়েন্ট ফিশারিজ এর কর্ণধার মোঃ শফিকুর রহমান চৌধুরী।
কক্সবাজার শহরের অভ্যন্তরে চিত্ত-বিনোদনের এ আন্তর্জাতিক মানের ফিশ এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্সটির অবস্থান। ইতিমধ্যে এটি পর্যটকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। সমুদ্র সৈকত দেখতে আসা পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় এখন যোগ হচ্ছে এ এ্যাকুরিয়াম। পর্যটন শিল্প বিকাশে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।
এতে বিচরণ করছে প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ। বিরল প্রজাতির মাছসহ এখানে আছে হাঙ্গর, পিরানহা, শাপলাপাতা, পানপাতা, কাছিম, কাঁকড়া, সামুদ্রিক শৈল, পিতম্বরী, সাগর কুঁচিয়া, বোল, জেলিফিস, চেওয়া, পাঙ্গাস, আউসসহ আরও অনেক মাছ ও জলজ প্রাণী।
শুরু থেকে কয়েক বছরের মধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে এই জীবন্ত এ্যাকুরিয়াম। বাংলাদেশে প্রথম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এটি দেখার জন্য পর্যটকরা নিয়মিত আসছেন। রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়াম দেখতে ঢাকা থেকে আসা শাহরিয়ার জামান এই প্রতিবেদককে বলেন, “সত্যি এটা বিস্ময়কর! কক্সবাজারে এমন একটি ফিস এ্যাকুরিয়াম গড়ে উঠেছে ভাবতেই অবাক লাগে যা পৃথিবীর উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে সাজানো হয়েছে এটি। প্রবেশ করেই অবাক হয়েছি এর সৌন্দর্য্য দেখে। মাথার উপরে মাছ ভেসে বেড়াচ্ছে, আমার পাশেই হাঙ্গর চারপাশে ঘুরঘুর করছে। সত্যি বড় এডভেঞ্জার এটি”।
কুমিল্লা থেকে আসা আরেক পর্যটক নাসির বলেন, “আমি কুমিল্লা থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি। গতকাল প্রথমে সমুদ্র পাড়ে গেলেও পরবর্তীতে জানতে পারি কক্সবাজারের ঝাউতলায় একটি ফিশ একুরিয়াম রয়েছে যা সমুদ্রের রহস্য উদঘাটন করতে পারবে। পরিবারসহ সবাই ঘুরে দেখলাম, সত্যিই বিস্ময়কর। অবাক হয়েছি ভেতরের সমুদ্রের তলদেশে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখে, এখানে আসার পর যে কোন ব্যক্তির কাছে মনে হবে তিনি সাগরের তলদেশে আছেন। আর চারপাশে খেলা করছে বর্ণিল প্রজাতির নানা মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী। এর নান্দনিক সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ সবাই”।
রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টার। এতে আছে ৮টি জোন। এর মধ্যে রয়েছে থ্রি-নাইন ডি মুভি দেখার নান্দনিক স্পেস, দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পাখি, ছবি তোলার আকষর্ণীয় ডিজিটাল কালার ল্যাব, শপিং স্পেস, লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট, এবাদত খানা, শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা, বিয়ে বা পার্টির কনফারেন্স হল ও ছাদে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি আয়োজন থাকবে বারবি কিউ’র। এছাড়া রয়েছে সুপরিসর পার্কিং ও লাগেজ রাখার লকার। এখানে এসে কোন বিরক্তি ছাড়াই ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা কেটে যাবে। পুরো সেন্টারে আছে নিরাপত্তা বেষ্টনি ও সিসিটিভির মাধ্যমে সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। ফিশ ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ ফি ৩০০ টাকা। এছাড়া বাচ্চাদের জন্যে আছে সুলভ মূল্যের টিকেটের ব্যবস্থা। সময় ও উপলক্ষ অনুযায়ী টিকেট মূল্যের উপর ৫-১০% ডিসকাউন্ট।
রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার ও ইনচার্জ জানান, কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতের আশপাশে দেখার মতো উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু নেই। যেসব পর্যটন স্পট রয়েছে, তা শহর থেকে দুরে, তাই পর্যটক ও স্থানীয়দের বিনোদনের জন্য এটি গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিদিনই এখানে মানুষের ভিড় বাড়ছে। এছাড়া অধিকাংশ শিশু-কিশোররা সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মাছ সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই তাদের বিলুপ্ত হওয়া বিভিন্ন মাছ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এটি কক্সবাজারবাসীর জন্য গৌরবের।
এফপি/এমআই