শিরোনাম: |
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরন্দ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরা বোধি বিহারে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে শতবর্ষী বোধিবৃক্ষ, চীবর ও বুদ্ধমূর্তির পোশাক। একই সঙ্গে বুদ্ধমূর্তির কপালে থাকা স্বর্ণের তিলকও চুরি করে নিয়ে গেছে তারা।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ভোরে। স্থানীয়রা জানান, রাতের নীরবতার মধ্যে ৪টা থেকে ৫টার দিকে এই অমানবিক ঘটনা ঘটে। সকালে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিহারে গিয়ে দেখতে পান—বোধিবৃক্ষের গায়ে পরানো পবিত্র চীবর ও বুদ্ধমূর্তির পোশাক খুলে আলাদা করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর বুদ্ধমূর্তির কপালের স্বর্ণ তিলকটিও উধাও।
স্থানীয় বাসিন্দা সরেশ বড়ুয়া বলেন, “সকালে বিহারে গিয়ে দেখি পোড়া কাপড়ের গন্ধ। বোধিবৃক্ষের চীবর ছিঁড়ে ফেলে আলাদা করে জ্বালানো হয়েছে। বুদ্ধমূর্তির পোশাকও খুলে পুড়িয়ে দিয়েছে। কপালের স্বর্ণ তিলকটাও নেই। এটা হঠাৎ কোনো কাজ নয়, পরিকল্পিতভাবে করা।”
প্যানেল চেয়ারম্যান মো. হাসান বলেন, “রাতে আমরা প্রবারণা পূর্ণিমার অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরেছিলাম। পুরো গ্রামজুড়ে উৎসবের আনন্দ ছিল। অথচ ভোরে খবর এলো—বোধি বিহারে আগুন। এটি নিশ্চয়ই ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের একটি অপচেষ্টা।”
বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, “ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। দায়ীদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”
ঘটনার পর থেকেই এলাকায় চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভোর থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিহারে জড়ো হচ্ছেন। চোখের সামনে আগুনে পোড়া চীবর ও বুদ্ধমূর্তির ক্ষতবিক্ষত অবস্থা দেখে তারা হতবাক হয়ে পড়েন। স্থানীয় বৌদ্ধ নেতারা বলেন, এটি শুধু ধর্মীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, এটি আঘাত তাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও অস্তিত্বের ওপর।
শতবর্ষী জ্যৈষ্ঠপুরা বোধি বিহার বোয়ালখালীর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সোমবার রাতে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বিহারে ছিল প্রার্থনা, আলো ও ফানুস উৎসব। আর সেই উৎসবের পরের ভোরেই এমন নির্মম ঘটনা ঘটে যায়।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমা হলো শান্তি, ক্ষমা ও সহমর্মিতার প্রতীক। এই রাতে এমন নৃশংসতা কেবল বৌদ্ধ সমাজ নয়, সমগ্র মানবতার প্রতি অপমান। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, বোধিবৃক্ষ কেবল একটি গাছ নয়—এটি বুদ্ধত্বের প্রতীক, জ্ঞানপ্রাপ্তির স্মারক। সেই পবিত্র বৃক্ষের চীবরে আগুন দেওয়া মানে বিশ্বাসে আগুন দেওয়া। তাই তারা বলছেন, এই ঘটনার বিচার না হলে সহনশীলতা ও সম্প্রীতির সমাজ হুমকির মুখে পড়বে।
এফপি/অআ