গত এক বছরে দেশে মব সন্ত্রাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতির সুযোগে এক শ্রেণির সুযোগসন্ধানী মব সৃষ্টি করে স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারের নানা পদক্ষেপে তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি মবের শিকার হচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। বিশেষ করে পুলিশের কর্মকর্তারা মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। গত কয়েকদিনে দেশের কয়েকটি স্থানে হামলার শিকার হয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে কক্সবাজারের রামু উপজেলায়র গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহজাহান মনিরকে অপদস্থ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, অনৈতিক সুবিধা দিতে না পারায়, কক্সবাজার রামু গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শাহজাহান মনিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভূঁয়া ফেসবুক আইডি থেকে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১অক্টোবর (রাত ৮:৫০টার) সময় এনসিপির রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে ৪জন গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এর রুমে প্রবেশ করে। তখন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এর রুমে একজন বয়স্ক ব্যক্তি সহ তিনজন মহিলা একটি অভিযোগের বিষয়ে তার সাথে কথা বলছিলেন। এ সময় এনসিপি নেতা পরিচয় দিয়ে তারা বলেন, কচ্ছপিয়া গর্জনীয়া এলাকায় খুন-খারাবি, চুরি-ডাকাতি, মারামারি এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা ব্যাপকভাবে হচ্ছে।
পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তখন জানান, আপনারা তো এলাকার সচেতন ব্যক্তি, কোথায় কোথায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তার একটি তালিকা দেন। তখন তারা বলেন যে এটা আপনাদের বিষয়।
গর্জনীয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এনসিপির নেতা পরিচয়ধারী নেতাদের বলেন, এলাকায় যে কোন ধরনের ঘটনার বিষয়ে আমার নিকট কোন সংবাদ আসলে অতি দ্রুত সে বিষয়টি পুলিশের উপস্থিতিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে আপনাদের এমন অভিযোগের তথ্য আমাদের কাছে নেই। আপনারা কোত্থেকে কিভাবে এই তথ্য সংগ্রহ করলেন? অভিযোগ আকারে দেন দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তখন এনসিপির এক নেতা গর্জনীয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে শাসিয়ে বলেন, আমার নাম নজরুল ইসলাম, আমি এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক গর্জনিয়া কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন এর নেতা। এই মুহূর্তে আপনাকে আসামি ধরতে হবে, কেন ধরবেন না? কেন ধরছেন না? এখন ধরতে হবে। এছাড়াও এলাকায় ডেভিল এবং বিভিন্ন বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা বুক ফুলিয়ে হাঁটছে, তাদেরকে কেন গ্রেপ্তার করছেন না বলে হুংকার প্রদান করেন। গ্রেপ্তার না করলে আপনাকে এই মুহূর্তে গর্জনীয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে।
ঘটনার সময় দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল পোস্ট পত্রিকার কক্সবাজার প্রতিনিধি মো. নেজাম উদ্দিন স্থানীয় দূর্গা পূজার দাওয়াত পেয়ে রাতে গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সহ পূজা মন্ডপে যাবেন তা অবগত করতে গেলে তিনিও দেখতে পান। এসময় এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি প্রবেশ করেন ও বিষয়টি তারা শুনে হতবাক হয়ে যান।
মব সৃষ্টিকারীদের মধ্যে আরও ছিলেন, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয়দানকারী নেতা নজরুল ইসলাম ও সঙ্গীয় এনসিপি নেতা দোছড়ি ২নং ওয়ার্ড কচ্ছপিয়া এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে নাহিদুল ইসলাম, ৬নং ওয়ার্ড কচ্ছপিয়া ইসমাইল ছেলে তৌসিফ এবং হাজিরপাড়া ৭নং ওয়ার্ড কচ্ছপীয়া সাব্বির আহমেদ এর ছেলে সাইফুদ্দিন।
একটি সরকারি অফিসের রুমে ঢুকে সরকারি কর্মকর্তাকে হুমকি প্রদান করা উচিত কিনা জনগণের কাছে প্রশ্ন করেন ইন্সপেক্টর শাহজাহান মনির। জনগণের অভিপ্রায়ে এনসিপি নেতা নজরুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
রামু থানার ওসি আরিফ হোসইন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত চলমান রয়েছে।
এফপি/এমআই