মহালয়ায় দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে শুরু হয়েছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আমেজ। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার শেষ প্রস্তুতি।
ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত মহালয়া থেকেই দুর্গামায়ের আগমন ঘটে। শাস্ত্রীয় বিধান মতে, মহালয়ার দুটি পর্ব রয়েছে—একটি পিতৃপক্ষ এবং অন্যটি দেবীপক্ষ। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি হয়, আর প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবীপক্ষ। এদিন গঙ্গার তীরে প্রার্থনা করে ভক্তরা মৃত আত্মীয়-স্বজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, দেবী দুর্গা মহিষাসুর নামের এক অসুরকে বধ করে অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির বিজয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই বিজয়কে স্মরণ করে প্রতি বছর আশ্বিন মাসে (সেপ্টেম্বর–অক্টোবর) দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয়।
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে শুরু হয়ে গেছে উৎসবের আমেজ। চট্টগ্রামের নিউমার্কেট, টেরিবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। মহালয়া থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত টানা দশদিন নানা আয়োজনে সেজে ওঠে দেশের বিভিন্ন বিপণিবিতান, শপিংমল ও স্থানীয় বাজার।
নিউমার্কেটস্থ আল-মদিনা ফ্যাশন হাউসের এক ব্যবসায়ী বলেন, “প্রতি বছর ঈদ ও পূজাকে কেন্দ্র করে বাড়ে ক্রেতাদের চাহিদা। পূজার কেনাকাটা শুরু হয় মূলত পূজা শুরুর ১৫ দিন থেকে ১ মাস আগে। এখন মূলত ক্রেতারা শেষ সময়ের কেনাকাটা করছেন, তাই চাপ বেশি।”
এদিকে প্রতিমার গায়ে রং-তুলির শেষ আঁচড়ে সাজিয়ে তুলতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা। সদরঘাটের একাধিক শিল্পী জানান, শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন—এই তিন মাসকে প্রতিমা তৈরির মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। সারাবছর টুকটাক কাজ থাকলেও এই সময়ে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আর এই সময়েই তাদের কদরও বাড়ে।
চট্টগ্রাম জেলায় ব্যক্তিগত ও ঘটপূজাসহ এ বছর মোট ২,৪৭৯টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে ১৬টি থানায় পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৭৭টি এবং জেলায় ২,২০২টি পূজামণ্ডপ রয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকগুলো ঘটপূজা।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় এই উৎসবের।
নগরের জেএম সেন হল, পাথরঘাটা, হাজারীগলি, গোয়ালপাড়া, দেওয়ানজীপুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিতে চলছে মণ্ডপগুলোর সাজসজ্জার কাজ। নানান শিল্পকর্ম ও চাকচিক্যে প্রস্তুত করা হচ্ছে মণ্ডপগুলো।
নগরের আদর্শপাড়া শ্রী শ্রী সন্তোষী মা লোকনাথ সেবাশ্রমের সাধিকা কানন বালা দেবী জানান, “দেবীকে বরণ করে নেওয়ার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। মায়ের আরাধনার ভক্তিময় আবহে চারপাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। আমরা বিশ্বাস করি, এই পূজা শুধু মানুষের নয়, জগতের প্রতিটি প্রাণীর মঙ্গল ও কল্যাণ বয়ে আনে।”
এদিকে নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা উদযাপনে পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমা পূজামণ্ডপগুলোর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৩৫৬টি এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৭১৬টি চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া ১,৪৪০টি পূজামণ্ডপে থাকবে সিসি ক্যামেরা/আইপি ক্যামেরা।