কুষ্টিয়ার আশ্রম থেকে লালন ফকিরের ৩১৪টি গানের মূল পান্ডুলিপি কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন শিলাইদহের তৎকালীন জমিদার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রায় ১৩৫ বছরের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক সেই গানের মূল পান্ডুলিপি বর্তমানে কলকাতার শান্তি নিকেতন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মূল পান্ডুলিপি ফেরত আনার দাবি জানিয়ে আসছেন লালন ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও গবেষকরা। কিন্তু তা ফেরত পাওয়া যায়নি।
এবার কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন একাডেমিতে সেগুলো ফেরত চেয়েছেন। এজন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন তিনি। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এ আবেদন পাঠানো হয়েছে।
লিখিত আবেদনে ডিসি উল্লেখ করেছেন, কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন আশ্রম থেকে লালন শাহের গানের একটি খাতা কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহের তৎকালীন জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যা বর্তমানে শান্তি নিকেতনে সংরক্ষিত আছে। প্রায় ১৩৫ বছরের পুরোনো উক্ত খাতায় লালন শাহের ৩১৪টি গান রয়েছে। ইতোপূর্বে শান্তিনিকেতন থেকে লালন শাহের গানের পান্ডুলিপির একটি অনুলিপি প্রেরণ করা হলেও মূল পান্ডুলিপি সেখানেই রয়ে গেছে।
প্রতি বছর লালন তিরোধান দিবস ও লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে লক্ষ লক্ষ দেশ-বিদেশি লালন ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও লালন গবেষকদের আগমন ঘটে। তাদের সকলের পক্ষ হতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গানের মূল পান্ডুলিপি কলকাতার শান্তি নিকেতন থেকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে ফেরত আনার দাবি উঠেছে। তদুপরি সরকার ১৭ অক্টোবর লালন তিরোধান দিবসকে ‘ক’ শ্রেণির দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং জাতীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় লালন তিরোধান দিবসের গুরুত্ব আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষ লক্ষ লালন ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও লালন গবেষকদের দাবির প্রেক্ষিতে লালন গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গানের মূল পান্ডুলিপি কলকাতার শান্তিনিকেতন থেকে সংগ্রহ করে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
এমতাবস্থায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গানের মূল পান্ডুলিপি কলকাতার শান্তি নিকেতন থেকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে ফেরত এনে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস পালন উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রস্ততিমূলক সভায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, লালন সাঁইয়ের ৩১৪টি গানের মূল পান্ডুলিপি ফেরত আনার জন্য আমরা সার্বিকভাবে চেষ্টা করছি। আমরা কলকাতা থেকে সেগুলো দ্রুত কুষ্টিয়ায় ফেরত আনতে চাই। এজন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। জানা গেছে, ফকির লালন সাঁই মুখে মুখে পদ রচনা করতেন। তার সেসব কথা সুরের ভুবনে বাধা পড়লেই রূপ নিতো গানে। তাই লালনের মুখনিঃসৃত বাণী লিখে রাখতেন তার শিষ্যরা। লালনের জীবদ্দশায়ই ভোলাই শাহসহ তার কয়েকজন শিষ্য গানগুলো লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নেন। দুটি খাতায় লিখে রাখা হয় ৫ শতাধিক গান। বাউল পদাবলীর অনুরাগী হয়ে এরই একটি খাতা নিয়ে যান শিলাইদহের জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এ প্রসঙ্গে লালন ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও গবেষকরা জানান, লালন ফকিরের গানের মূল খাতাটা এক সময় শান্তিনিকেতনে নিয়ে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেটা বর্তমানে শান্তি নিকেতনে সংরক্ষিত আছে। প্রায় ১৩৫ বছরের পুরোনো খাতায় লালনের ৩১৪টি গান রয়েছে। ইতোপূর্বে শান্তি নিকেতন থেকে লালন শাহের গানের পান্ডুলিপির একটি অনুলিপি প্রেরণ করা হলেও মূল পান্ডুলিপি  ফেরত দেওয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ লালন ভক্ত, অনুসারী ও গবেষকরা। তারা দ্রুত মূল খাতাটি ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এফপি/রাজ