নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে নিয়োগ দেওয়ার আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শুক্রবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একজন সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ জানান, রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাউদেল ও সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেলের সঙ্গে পরামর্শের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞের দাবি, বিক্ষোভকারীরা সুশীলা কার্কিকেই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে দেখতে চান। আজ স্থানীয় সময় সকালে রাষ্ট্রপতির বাসভবনে বৈঠকের পর তার নিয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। তবে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
কয়েক সপ্তাহ ধরে নেপালে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও কর্মসংস্থানের অভাবের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন চলছিল। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয় যখন সরকার ভুয়া খবর ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করে। পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়।
রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত ৩৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩০০ জন আহত হন। সেনাবাহিনী কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। অবশেষে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
২০১৬ সালে নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া সুশীলা কার্কি দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান ও ন্যায়বিচারের জন্য পরিচিত। তরুণ আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে থেকে একজন নিরপেক্ষ নেতৃত্বই দেশে অন্তর্বর্তী স্থিতিশীলতা আনতে পারে।
শুক্রবার সকালে কাঠমান্ডুতে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। দোকানপাট খুলতে দেখা গেছে, সড়কে কিছু যানবাহনও চলাচল করছে। তবে সেনা টহল এখনো জারি আছে এবং বেশ কিছু এলাকায় চলাচলে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
চীন ও ভারতের মতো দুই পরাশক্তির মাঝখানে অবস্থিত নেপাল ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলোপের পর থেকে প্রায় নিয়মিত রাজনৈতিক সংকট ও সরকার পরিবর্তনের মুখে পড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে তা নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজনৈতিক সংস্কারের পথ খুলে দিতে পারে।
এফপি/রাজ