Dhaka, Saturday | 13 September 2025
         
English Edition
   
Epaper | Saturday | 13 September 2025 | English
ভাঙ্গায় ছোট ভাইয়ের বটির কোপে বড় ভাই নিহত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কাল বন্ধ
নাশকতা মামলায় আদমদীঘিতে কৃষকলীগ নেতা গ্রেপ্তার
নেছারাবাদে গৃহবধূর আত্মহত্যা, পরিবারের দাবি জিনের আছর
শিরোনাম:

রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৩

উখিয়ায় বনের জমিতে দোকান, কোটি টাকার চাঁদাবাজি

প্রকাশ: শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৭:০০ পিএম  (ভিজিটর : ৩৬)

কক্সবাজারের পালংখালির বাসিন্দা নজু মিয়ার ছেলে আলমগীর। আওয়ামী সরকার আমলে বিভিন্ন নেতাদের ক্ষমতা দেখিয়ে উখিয়ার ক্যাম্প ১৩ কাঠালতলী বাজার এলাকায় নিজেই গড়ে তুলেছেন জমিদারিত্ব। বনের জমিতে প্রায় ২৫০টি দোকান করে প্রতিটি দোকান থেকে মাসিক ৫ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করে বছরে কোটিকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এমন কি আওয়ামী লীগ নেতা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নামের ক্যাম্পে বাজারের নাম করণ রয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি আড়ালে থাকলেও এখনো তার ভাড় ঠিক সময়ে তার হাতে পৌঁছে যায় বলে খবর রয়েছে। 

এদিকে ক্যাম্প-১৩তে প্রায় ১ হাজার দোকান থাকলেও ক্যাম্প ইনচার্জ কোন ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ বাঁকা চোখে দেখছেন বলে জানা যায়। শুধু আলমগীর নয়, একটি সরকারি তথ্যে উঠে এসেছে বেশ কয়েক জনের নাম।

এদিকে সরকার ২০১৭ সালে মানবিক বিবেচনায় প্রায় ১১লাখের অধিক উখিয়া টেনাফের বনের জায়গা দখল করে থাকা শুরু করলে মানবিক বিবেচনায় সরকার কোন পদক্ষেপ দেননি। কিন্তু এই রোহিঙ্গাদের পুঁজি করে ক্যাম্পে গড়ে উঠেছে মাফিয়া সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট বনের জমিভাড়া দিয়ে মাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এই বিষয় নিয়ে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ থেকে ক্যাম্প ১৩ ইনচার্জ বরাবর বনে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। চলতি মাসের ৭ তারিখ পত্র প্রদান করেন উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা। পত্রে অবৈধ ভবে ভাড়া পরিচালনাধিন সিন্ডিকেট ভিত্তিক স্থাপনা উচ্ছেদ করার অনুরোধ করে ক্যাম্প ইনচার্জকে।

এদিকে বনের জায়গা দখল করে ভাড়া দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর বনবিভাগের কাছে আসলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কারা অবৈধ দখল করে ব্যবসা করে যাচ্ছে এবং মাসিক মোটা অংকের ভাড়া তুলছে তা তদন্ত করলে উঠে আসে বেশ কিছু নাম। তাদের মধ্যে পালংখালি ইউনিয়নের  লাল মোহাম্মদ এর ছেলে নুরুল আলম প্রকাশ শেখ আলম তার নিজের নামে করা বাজার (আলম বাজার) তার দোকান রয়েছে ৪৫টি। আলম প্রতি মাসে একটি দোকান থেকে ভাড়া আদায় বরে ৫ হাজার টাকা করে। ওলা মিয়ার ছেলে শামশুল আলম আলম বাজার ও কাঠাল তলী বাজারে ২০টি করে মোট ৪০টি কোন রয়েছে।

মোহাম্মদ হোসেন এর ছেলে জয়নার আবেদীন (সাবেক মেম্বার) কাঠালতলী এলাকার বল খেলার মাঠে পাশে ১শত দোকান রয়েছে বলে জানা যায়।

হাবিবুর রহমানের ছেলে মোঃ হামিদ মাস্টার কাঠালতলী বাজারে ১ শত দোকান করেছে। কাদের হোসেন এর ছেলে মোঃ বাবুল কাঠালতলী বাজারে ১৫০টি দোকন রয়েছে। মৃত হামিদ আলীর ছেলে মৌলবী ফজর হক সিমকার্ড ওয়্যার হাউজের পাশে ৩০টি দোকান করে ভাড়া নিচ্ছে। মৃত সুলতান আহমদের ছেলে আলী মিয়া একই এলাকায় ১০টি দোকান করেছে। কাসিম আলীর ছেলে নুলল আমিন সাবে মেম্মার বল খেলার মাটের পাশে ২০টি দোকান করে ভাড়ায় চলমান রয়েছে। দুদু মিয়ারি ছেলে সোনা মিয়া কাঠালতলী বাজারে দখল করে ৩০টি দোকান করেছে। শফিুকর রহমানের ছেলে নুরুল হক ক্যাম্পের পুলিশ বক্সের পাশে ২টি দোকান করেছে। মৃত বাচার মিয়ার ছেলে সেকান্তর মিয়া কাঠালতলী কাজারে ৩০টি দোকান করেছে। মৃত বাচা মিয়ার ছেলে মোঃ আলম একই এলাকায় ২০টি দোকান করে ভাড়া দিয়েছে। মৃত আব্দুল মালেক এর ছেলে মোঃ শাহজাহান একই বাজারে ৮০টি দোকান গড়ে তুলেছে। মুত নজু মিয়ার ছেলে সওয়ার মিয়া একই বাজারে ২৫০টি দোকান করে ভাড়া আদায় করছে। মৃত মোঃ ইসলাম এর ছেলে আলী আকবর ঔ বাজারে ৩০টি দোকান দখলে রয়েছে। মৃত ফয়েজ আমদের ছেলে আব্দুর রহিম ঐ বাজারে ২০টি দোকান গড়ে তুলেছে। ওরা মিয়ার ছেলে জনু সরকার ঐ বাজারে ২০টি দোকান গড়ে তুলে ভাড়া আদায় করছে। ননজু মিয়ার ছেলে মোঃ আলমগীর একই বাজারে ২৫০টি দোকান অবৈধভাবে বনের জমি দখল করে দোকান তৈরি করে ভাড়া আদায় করছে। মৃত আমীন শরীফের ছেলে সুলতান আহমদ প্রকাশ বড়ু চেয়ারম্যান বাজার এলাকায় ২৫টি দোকান গড়ে তুলেছে।

এসব অবৈধ দখলদাররা বনের জমি দখল করে বিগত আওয়ামী সরকার থেকে আজ পর্যন্ত বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও স্থানীয় প্রশাসন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি থাকার কারণে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। সম্প্রতি জুলাই আন্দোলনের পরে যারা ক্যাম্প ১৩ তে সিন্ডিকেট ভিত্তিক বনের জায়গা দখল করে ১ হাজারের অধিক দোকান বানিয়ে ভাড়া নিচ্ছে তাদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ক্যাম্প-ইনচার্জ (সিনিয়র সহকারী সচিব), ক্যাম্প-১৩ আল ইমরানকে বনবিভাগ চিঠি প্রদান করলেও তিনি রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

আল ইমরানের সাথে মোবাইলে কথা হলে প্রতিবেদককে ক্যাম্পে যেতে বলেন এবং সাসনাসামনি বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান।

এদিকে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বন বিভাগের জায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ বাজার উচ্ছেদ করতে বনবিভাগ পদক্ষেপ হাতে নিলেও আআরসির কোন সহযোগিতা না থাকার কারণে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে জানান। যার কারণে প্রভাব খাটিয়ে দোকানপাট নির্মাণ করে এখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আওয়ামী লীগের একটি সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটে রয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।

পালংখালী ইউনিয়নের ১৩ নম্বর ক্যাম্পে নামে-বেনামে গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক বাজার, যা নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী শ্রমিক লীগ নেতা আলমগীর, যুবলীগ নেতা সরওয়ার ও ছাত্রলীগ নেতা নিশান। নিজেদের নামেই বাজারের নামকরণ করেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ক্যাম্পে আত্মগোপনে থেকে এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে বাজার এখন সরাসরি তারা না চালালেও এখন আরেকটি সিন্ডিকেট দিয়ে ঠিকই আগের আয় রোজগার ঠিক রেখেছে গিত সরকারের নেতারা। সম্প্রতি বনবিভাগ থেকে একটি তালিকা প্রকাশ হলে ক্যাম্প ১৩ কারা পরিচালনা করছে তা পরিস্কার উঠে এসেছে।

অভিযোগ আছে, তিনটি বাজার থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আয়ের বিশাল একটি অংশ ব্যবহৃত হচ্ছে তাদের পতিত আওয়ামী লীগ, ছিনতাইকারী, ডাকাত দল ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্প-কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা রাসেল ও মিজান বাহিনী দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে ওই সিন্ডিকেট।

এই বাজার গুলোতে রয়েছে মুদির দোকান, ফার্মেসি, কাঁচা তরি তরকারি, হোটেল, টি স্টল, গ্যাস স্টেপের দোকান, রকমারি স্টোর, মাছ ও মাংসের দোকান, কাপড়ের দোকান, মোবাইলের দোকান, জুয়েলারি দোকান। এসব দোকানের কোনটিরই বৈধ ট্রেড লাইসেন্স ও কতৃপক্ষের ছাড়পত্র নেই। অবৈধ হাটবাজারে কয়েক হাজার দোকান বসিয়ে স্থানীয় সরকার ও উপজেলা পরিষদকে কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব ও কর ফাঁকি দিচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসানো বাজারগুলো আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতারা ব্যবসা পরিচালনা করছে রোহিঙ্গা মাঝি থেকে শুরু করে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। এই বাজারগুলোর কারণে ব্যবসা হারাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, একসময় রোহিঙ্গা আগমনের পূর্বে বন বিভাগের জায়গা লিজ নিয়ে প্লট তৈরি, চারা রোপণ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয়রা। কিন্তু বর্তমানে অবৈধভাবে দোকানপাট ও বাজার গড়ে তোলে জায়গাগুলো দখল করে ফেলা হয়েছে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতারা।

এসব অপকর্ম ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বন বিভাগকে আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশীদারেরা। এছাড়া ক্যাম্পের ভেতরে এই ধরনের অবৈধ বাজার থাকলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব বলে মনে করছেন ছাত্র প্রতিনিধি মোহাম্মদ সোহেল।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, বনের জায়গা দখল করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এখানে শুধু ক্যাম্প থাকার কথা । কিন্তু একটি সিন্ডিকেট বিগত দিনে শুধু ১৩নং ক্যাম্পে ১ হাজারের অধিক দোকান গড়ে তুলেছে। সেখান থেকে মাসিক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি। ক্যাম্প ইনচার্জ মহোদয়কে চিঠি প্রদান করা হয়েছে তা উচ্ছেদ করার জন্য। যদি আমাদের সহযোগিতা করেন তবে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান, যেহেতু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে আমার কোন বক্তব্য নেই। তারপরেও যতটুকু জানি সেখানে বিভিন্নভাবে বাজার গড়ে উঠেছে যা অপরাধ। এর ফলে হোস্ট কমিউনিটির উপর প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে যদি বনবিভাগ সজাগ থাকে এসব সিন্ডিকেট ভিত্তিক বাজার উচ্ছেদ করতে পারে। 

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝