দেশের খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী রংপুর অঞ্চলে বর্তমানে তীব্র সার সংকট দেখা দিয়েছে। আমন মৌসুমের ঠিক মাঝখানে এসে সারের এই কৃত্রিম সংকট কৃষকদের ফেলেছে চরম বিপাকে। ন্যায্যমূল্যে সার না পেয়ে দিশেহারা কৃষকরা একদিকে যেমন চড়া দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, তেমনি অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কম সার ব্যবহার করে ফলন হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হলে চলতি মৌসুমে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
আমন ধান, ভুট্টা, লাউ, বেগুন, কাঁচা মরিচ, করলাসহ গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে ব্যাস্ত সময় পার করছেন রংপুরের কৃষকরা। ভালো ফলনের আশা করলেও পর্যাপ্ত সার না পাওয়ায় বাড়ছে তাদের লোকসানের শংকা। কৃষকদের অভিযোগ ডিলার পয়েন্ট চাহিদামত সার পাচ্ছেন না তারা।
তবে কৃষকরা জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে একশো থেকে তিনশো টাকা বেশি দিলে চাওয়া মাত্র সার বিক্রি করছেন ডিলাররা।
রংপুরের বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ধানক্ষেতের গাছ হলুদভাব হতে শুরু করেছে, যা সারের অভাবের স্পষ্ট লক্ষণ বলে জানাচ্ছেন অনেকে। কৃষকরা দিনের পর দিন সারের ডিলারদের দোকানে ধর্না দিয়েও প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেনা। রংপুরের কৃষকরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, কবে তাদের ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় সার হাতে পাবেন এবং তাদের স্বপ্নগুলো বাঁচবে।
রংপুর মিঠাপুকুরের কৃষক সজিব, সাহালোম, তারেক, রংপুর সদরের ফেরদৌস ও স্বপনসহ কয়েকজন বলেন, আমরা কৃষিকাজ নিয়ে বিপদে আছি। বর্তমানে আমনসহ সবজি চাষ করছি। কিন্তু সারের অভাবে অনেক কাজ করতে পারছিনা জানিনা ফসল কেমন হবে। কৃষি বিভাগে যোগাযোগ করলে শুধু আশ্বাস দেয়।
আমাদের প্রশ্ন, শুধু আশ্বাস নয়, দ্রুত সারের সমাধান চাই। কারণ, ফসলের বৃদ্ধির একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে এবং সেই সময় পার হয়ে গেলে সার দিলেও কাঙ্খিত ফলন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডিলার জানান, “আমাদের গোডাউনে পর্যাপ্ত সার আসছে না। কোম্পানিগুলো থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে কৃষকদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।”
তিনি কালোবাজারি ও উচ্চমূল্যে সার বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের কাছে সার থাকলে তারা বিক্রি করতেন।
এদিকে কয়েকজন সার ডিলারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত সার সরবরাহ না থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।
তবে ২/১ জন ডিলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, সরকারের বরাদ্দ অনুযায়ী সার বিক্রয় করা হচ্ছে। দাম বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলায় সেপ্টেম্বর মাসে ইউরিয়া ৫ হাজার ৫৬৫ মেট্রিকটন, টিএসপি ৯৩২ মেট্রিকটন, ডিএপি ৩ হাজার ৭২৪ মেট্রিকটন, এমওপি ২ হাজার ৬১৪ মেট্রিকটন বরাদ্দ রয়েছে। কৃষকদের কাছে বেশি দামে সার বিক্রি করার অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়ার কথাও জানাচ্ছেন এই বিভাগ।
কৃষি বিভাগ আরো জানান, রংপুর জেলায় বিসিআইসি ১০৬ টি ও বিএডিসি’র ১৮২ জন ডিলার সার বিক্রি করেন। এবারে সারের সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্য ইউরিয়া-১ হাজার ৩৫০ টাকা (প্রতি বস্তা), টিএসপি- ১হাজার ৩৫০ টাকা (প্রতি বস্তা), ডিএপি- ১হাজার ০৫০ টাকা (প্রতি বস্তা), এমওপি- ১ হাজার টাকা (প্রতি বস্তা)। এর বাইরে দাম নেয়ার সুযোগ নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিডি মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, রংপুরে সরকার কতৃক সারের দাম নির্ধারণ করা আছে। এর বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এ রকম যদি কোন অভিযোগ আসে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা সারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য চেষ্টা করছি।
তবে কিছু অভিযোগ পাওয়ায় আমরা তাৎক্ষনিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে।
এফপি/রাজ