Dhaka, Saturday | 13 September 2025
         
English Edition
   
Epaper | Saturday | 13 September 2025 | English
ভাঙ্গায় ছোট ভাইয়ের বটির কোপে বড় ভাই নিহত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কাল বন্ধ
নাশকতা মামলায় আদমদীঘিতে কৃষকলীগ নেতা গ্রেপ্তার
নেছারাবাদে গৃহবধূর আত্মহত্যা, পরিবারের দাবি জিনের আছর
শিরোনাম:

৫৪ বছর রেল স্টেশনে মা-মেয়ের বসবাস

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫, ৬:০১ পিএম  (ভিজিটর : ৩৯)

একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের বারান্দায় ৫৪ বছর ধরে বসবাস করছেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ খোদেজা বেগম। যুদ্ধের আগে খেজুরের রস খেয়ে মারা যান খোদেজার স্বামী। এরপর মেয়েকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে নেমে পড়েন খোদেজা। 

মেয়েকে নিয়ে ১৯৭১ সালের শেষের দিকে রাজবাড়ীর পাংশা থানার বাগদুলি গ্রাম ছেড়ে জীবিকার উদ্দেশে চলে যান কুষ্টিয়ায়। সেখানে কোর্ট স্টেশনে আশ্রয় নেন। খেয়ে না খেয়ে এই স্টেশনের বারান্দায় পার করেছেন দিন-রাত। 

খোদেজা বেগম মেয়ে বাতাসির বয়স সঠিকভাবে বলতে না পারেননি। তিনি জানান- কুষ্টিয়ায় যখন আসেন, তখন মেয়ে কোলের বাচ্চা। বছরখানেক হবে। এরপর থেকেই এই স্টেশনের আলো-বাতাসেই বেড়ে উঠেছেন বাতাসি। স্থানীয়রা এখন তাঁকে বাতাসি পাগলি নামেই চেনে। কখনো স্টেশনের পূর্ব দিকে, আবার কখনো পশ্চিম দিকের চায়ের দোকানে নানান গল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি।

দিনে সাত কাপ চা পান করা বাতাসি বেগমের অভ্যাস। কোর্ট স্টেশনে ঝাড়ু দিয়ে আর মা খোদেজা বেগমের ভিক্ষার টাকা দিয়ে চলে তাদের দুজনের সংসার।

বয়সের ভারে ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না খোদেজা বেগম। তবু অস্পষ্টভাবে বলেন, “যুদ্ধের সময় ফ্যান-পানি খাইয়ে দিন কাটায়ছি। যুদ্ধ শেষ হলিই মিয়াডা (মেয়েকে) নিয়ে চলি আসি কুষ্টিয়া কোট স্টেশনে। মিয়া নিয়েই কাজকাম করতাম আর এই স্টেশনে রাত কাটাতাম। জীবনের সাথে যুদ্ধ করে রাতে থাকতে হতো এ স্টেশনে।”

কথা বলতে বলতে গলা ধরে এলে অনেকক্ষণ চুপ থাকেন বৃদ্ধ খোদেজা বেগম। এরপর প্রতিবেদককে জিজ্ঞাসা করেন, “বাবা, মরার আগে ভাতা কার্ড পামুনি? ভাতা কার্ড কারে কয় বাবা? আর আমি তো ভোট দিইনে, ভোটার হতি হয় কেম্বা বাবা?”

এসময় খোদেজা বেগম আক্ষেপ নিয়ে বলেন, “মিয়াডারে নিয়া চিন্তা। আমি নাই মিয়াডারে পাহারা দিয়ে গেলাম। আমার তো মরনের টাইম হয়ছে। বাতাসির আল্লাহ ছাড়া উপায় নাই। এই স্টেশন আমার এখন মাথা গুঁজার ঠাঁই। ধুলা-ময়লা নিয়া পড়ে থাকি। এইডা যেন না হারায় বাবা।”

বাতাসির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “আমার একটা ঘরের ব্যবস্থা করলি আমি ঘরে থাকতি পারতাম। সেই ছোটকালে আইছি। আজও ঘর হলো না। আর আমারে ঘর দিবি কিডা! আমি তো ভোটার না। কেম্বা করে ভোটার হব সমবাদিক?”

কোর্ট স্টেশনের সর্দার মুকুল বলেন, “আমার বাবা ছিলেন সর্দার। আমিও সর্দারগিরি করছি। আমি সেই ছোটবেলা থেকে মা-মেয়েকে দেখছি।”

স্টেশনে বই-পত্রিকা বিক্রেতা কামাল বলেন, “আমিও প্রায় ৩২ বছর ধরে ব্যবসা করছি। এখানেই দেখে গেলাম তাদের। তবে তাদের মা-মেয়ের মাঝে কোনো খারাপ কিছু দেখলাম না। এখানেই কাটিয়ে দিচ্ছে এতগুলো বছর। তাদের দেখার কেউ নেই। সমাজের উচ্চবিত্তরা একটু সহায়তা করলে এরা একটু ভালো থাকতে পারত।”

কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন মাস্টার ইতি আরা বলেন, “বাতাসি খুব ভালো মেয়ে। তার মাও খুব ভালো মানুষ। জোরে কথা বলে না। তাদের আচরণ ভালো। আমরা চাই সমাজের বিত্তবানেরা এগিয়ে আসুক, তাদের মতো মানুষকে সহযোগিতা করা উচিত।”

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝